এসএসসি শেষ হয়েও শান্তি নেই, আবার বই খাতা নিয়ে বসা, টেস্টপেপার সলভ করা, ভালো কলেজ পাওয়ার জন্য নামিদামি কোচিং-এ ভর্তি হওয়া। এই দুষ্ট চক্র যেন ছুটিটাকেই মাটি করে দেয়। আসলেই কি কলেজ নিয়ে এত দুশ্চিন্তার দরকার আছে ? কলেজ ভর্তির প্রশ্ন কি অনেক কঠিন হয় ? নানা কথার ভিড়ে আসল সত্যটুকু এবার জেনে নিই।
এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই মূলত কলেজ সিলেক্ট করা হয়। শুধুমাত্র নটরডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ এবং সেন্ট যোসেফ কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এই পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হয় শুরুতেই এই ব্যাপারে একটু ধারণা দেই। আচ্ছা বলো তো- পাটের আঁশ কোন ধরনের ফাইবার ? তুমি চোখ বন্ধ করে বলবে, বাস্ট ফাইবার। খুবই পরিচিত প্রশ্ন, না ? আমার সময় নটরডেম কলেজে এই প্রশ্নই এসেছিলো।
আচ্ছা, আরেকটা প্রশ্ন তোমার মনে জাগতে পারে, কোন কোন সাব্জেক্টের উপর কলেজগুলো পরীক্ষা নিয়ে থাকে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে যখন ভর্তি সম্পর্কিত সার্কুলার দেওয়া হবে। গতবারের সার্কুলারটা দেখলেই তুমি অনেক কিছু আন্দাজ করতে পারবে।
বাংলায় বিতৃষ্ণা নয়
কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে যেসব প্রশ্ন আসে, কোনোটাই আহামরি কঠিন না। এজন্য তোমার বাংলা বইয়ের সব কবি সাহিত্যিকদের জন্মসাল – মৃত্যুসাল মুখস্থ করা লাগবে না। তবে হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে খুব ভালোমতো জেনে রাখবে।
একইভাবে সহপাঠ বইয়ের সবগুলো নাটক আর উপন্যাসের নামও তোমার মনে রাখার দরকার নেই। কিন্তু কিছু জিনিস অবশ্যই জেনে রাখবে, যেমন- বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাসের নাম কী? পোকামাকড়ের ঘরবসতি কে লিখেছেন? এই প্যাটার্নের প্রশ্নই কিন্ত ঘুরেফিরে আসে। সমস্যা কি জানো – আমরা পরীক্ষার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্যাটার্নটাই ধরতে পারি না।
খালি একবার একটু কষ্ট করে টেস্টপেপারটা নিয়ে বসবে। টেস্টপেপারের প্রশ্নগুলা দেখে যাবে – আশা করা যায়, এর বাইরে বাংলা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
ইংরেজি ইরিটেটিং না
কলেজগুলো সাধারণত ইংরেজিতে কঠিন প্রশ্নই করে থাকে। অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারে না, তাই বলে কিন্তু তাদের চান্স আটকায় না!
প্রস্তুতির কথা বললে Parts of Speech ভালোমতো পড়ে যাবে। কোনটা Noun, কোনটা Pronoun, কোনটা Verb এগুলো চিনতে পারতে হবে।
এছাড়াও টেক্সট বুকটা একটু দেখে যাবে। বিশেষ করে নটরডেম কলেজ টেক্সট বুক থেকে প্রতিবছরই কিছু প্রশ্ন করে ।
ম্যাথ-এর মহাজট
ম্যাথ-এর ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি ক্যালকুলেশন করা শিখতে হবে, সবচেয়ে ভালো হয় ক্যালকুলেটর ট্রিক্স জেনে রাখলে।
এছাড়াও বই থেকে বেছে বেছে ম্যাথ করবে, কারণ- মাঝে মাঝে বইয়ের এসব ম্যাথই সরাসরি দিয়ে দেয়। জ্যামিতির ক্ষেত্রে উপপাদ্যগুলোর সাধারণ নির্বচন মনে রাখার চেষ্টা করবে – তাহলেই হবে।
ফিজিক্স-এর প্যারামিটার
ফিজিক্স-এর ক্ষেত্রে সূত্রের প্রয়োগ জানাটা খুব দরকার। সবগুলো সূত্রকে মাথায় গেঁথে ফেলতে হবে। বইয়ের উদাহরণ এর প্রত্যেকটা ম্যাথ করতে হবে।
অনেকেই চ্যাপ্টার ১-এর ম্যাথগুলোকে সহজ ভেবে করে না, এই কাজ ভুলেও করা যাবে না। আমার সময় চ্যাপ্টার ১ থেকেই দুটো প্রশ্ন এসেছিলো।
চাপ অধ্যায়টা ভালোমতো পড়বে, এখান থেকে চাইলে ম্যাথ অনেক প্যাঁচানো যায়। চাপের কন্সেপ্ট ক্লিয়ার করতে আমি অনেককেই এই ভিডিওটি রেকমেন্ড করে থাকি। তোমরাও চাইলে দেখে নিতে পারো।
রসায়নের রসে ভাসো
রসায়নে বিক্রিয়াগুলো মনে রাখতে হবে, সঙ্গে প্রভাবকের নাম এবং কোন তাপমাত্রায় বিক্রিয়া সংগঠিত হয় এগুলোও জেনে রাখবে।
জৈব যৌগকে খুব গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। বাকি সব অধ্যায়ের মতো এটা পড়বে। কিছু বেসিক জিনিস অবশ্যই শিখে ফেলবে; যেমন – রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমতাকরণ, যোজনী, পর্যায় সারণির প্রথম ৩০টা মৌলের নাম, সংকেত, গ্রুপগুলোর নাম, আইসোটোপের ব্যবহার ইত্যাদি।
টেস্টপেপারের চেয়ে মেইন বইয়ের পিছনে বেশি সময় দিও। রসায়নে বইয়ের একদম ভেতর থেকে প্রশ্ন আসতে দেখা যায়।
একটা মজার কথা বলি। রসায়নের ৩য় অধ্যায় পড়তে গিয়ে আমি জেনেছিলাম, চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালে। এই প্রশ্নটাই নটরডেমে এসেছিলো, কিন্ত রসায়নে না এসে এসেছিলো ইংরেজিতে। আসলে কোন পড়া কখন কাজে লাগে – এটা কেউই জানে না।
জীববিজ্ঞান জান নেবে না
কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানের কোনো চিত্র আঁকা লাগে না। কিন্তু চিহ্নিত চিত্র মাথায় থাকা লাগে, অঙ্গানুর নামগুলো এমসিকিউতে চলে আসে। বায়োলোজির জন্য আলাদাভাবে প্রিপারেশন নেওয়ার দরকার নেই, এসএসসির জন্য যা পড়েছো সেটা দেখে গেলেই হবে।
কোচিং-এর কচকচি
এবার আসি কোচিং প্রসঙ্গে। কলেজ ভর্তির জন্য আসলেই কি কোচিং করা লাগে? কোচিং করলেও অনলাইনে করবো নাকি অফলাইনে, মতিঝিলের আশেপাশে করবো নাকি ফার্মগেটে? কত শত প্রশ্নই আমাদের মাথায় ঘোরাফেরা করে! এক বাক্যে বললে- কলেজ ভর্তির জন্য কোচিং করার কোনো দরকার নেই, যদি তোমার পড়া গোছানো থাকে।
পড়া গোছানো কিনা বুঝবো কিভাবে? খুব সহজ- তুমি এসএসসির সময় যথেষ্ট পড়েছো কিনা, বেশি বেশি প্রাক্টিস, মডেল টেস্ট দিয়েছো কিনা – এইসব করে থাকলে তোমার প্রস্তুতি যথেষ্ট গোছানো। তোমার আর কিছু করার দরকার নেই , শুধু পরীক্ষার আগের সপ্তাহে সবগুলো পড়া রিভিশন দিয়ে গেলেই চলবে।
তুমি চাইলে কোনো টাকা ছাড়াই কলেজ ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নিতে পারো। ফাহাদ স্যারের ভিডিওগুলা দেখে যাও। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির কন্সেপ্ট একদম ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
কোচিং যদি করতেই চাও
অনেকে আবার অনলাইনে পড়তে পারে না। পড়ার জন্য অনলাইনে বসলেও ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে, ইউটিউবে গান শোনে। পড়ার সময় পড়া না হয়ে হয় অন্য কিছু। তাদের জন্য অফলাইন কোচিং ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে উদ্ভাস সবচেয়ে সেরা। উদ্ভাস সপ্তাহে তিনদিন দুইটি করে ক্লাস নিয়ে থাকে। পাশাপাশি প্রতিদিন পরীক্ষাতো থাকছেই। এই প্রক্রিয়ায় তুমি যদি নিজের পড়াটাকে গুছিয়ে নিতে পারো, তাহলে কলেজ পরীক্ষা নিয়ে তোমার আর কোনো ভয়ই থাকবে না।
শোনা কথায় কান দিয়ে মতিঝিলের নামী-দামী কোচিং-এ ভর্তি হতে যেও না। এসব কোচিং সেন্টারে অযথা কঠিন প্রশ্ন সলভ করিয়ে থাকে, যেই প্রশ্নগুলো কলেজে কোনোবারই আসে না!
এবার একটু কমার্স এবং আর্টস বিভাগের পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু বলি । কমার্স এর জন্য সাধারণ গণিত বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ । বইয়ের প্রতিটা ম্যাথ উদাহরণসহ করে যাবা , ক্যালকুলেশন ভুল যেন না হয় এইদিকে একটু খেয়াল রাখবে। বাংলা-ইংরেজিও সমানভাবে পড়বে। ইংরেজির ক্ষেত্রে Idioms and Phrase পড়ে যাবে। আর্টসের জন্য বাংলায় খুব ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। শুধু টেস্ট পেপারের এমসিকিউ না পড়ে বইয়ের লাইন বাই লাইন পড়তে হবে। ইংরেজির পিছনে বেশি সময় দিবে, বেসিক জিনিসপত্রে যেন ভুল না হয়। আরেকটা বিষয়, তুমি স্কুলে সায়েন্স নিয়ে পড়ে থাকলেও কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে আর্টস কিংবা কমার্সে পরীক্ষা দিতে তোমার কোনো বাধা নেই । অর্থাৎ বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ সব কলেজই রাখে।
শেষ পরামর্শ
তুমি যদি আজকে থেকে কলেজ ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে চাও, তাহলে প্রথমে একটা কাজ করতে পারো। বিগত বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসে ওই ব্যাপারে একটা আইডিয়া নাও। এখন তুমি বলতে পারো – প্রশ্নগুলা পাবো কই? সহজ উত্তর- বাজার থেকে কলেজ ভর্তির যে কোনো একটা বই কিনে নাও, ঐখানেই সব পেয়ে যাবে। শুরুতে সাইন্সের সাবজেক্টগুলো পড়ো , সাধারণ গণিত বিষয়ে সার্কুলার পাওয়ার পরে প্রস্তুতি নাও। বাড়তি চাপ নিও না, আস্তে আস্তে পড়া শুরু করো।
তোমার দরকারি বইগুলো এখান থেকে কিনে নিতে পারো
এসএসসির বন্ধে শুধু পড়া পড়া করলেই হবে? মুভি-সিরিজ দেখবে না? বান্দরবান, জাফলং, মাধবকুন্ড ঘুরবে না? অবশ্যই ঘুরবে। ব্যাডমিন্টন খেলবে, ক্রিকেট খেলবে, কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকে একটু পড়াশোনা করো। প্রতিদিন টেবিলে একটু সময় দাও, আগের পড়াগুলো গুছিয়ে নাও , টেস্ট পেপার সলভ করো, এই জিনিসগুলা এইচএসসি লাইফেও তোমাকে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
সবশেষে একটা কথা- কলেজ ভর্তির জন্য অনেকেই পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে সবাই কিন্তু পরীক্ষার্থী নয়, অনেকেই জাস্ট দেওয়ার জন্য দিচ্ছে। এখন তুমিই ঠিক করো তুমি কি শুধুমাত্র একজন আবেদনকারী নাকি একজন পরীক্ষার্থী ?
কলেজে ভর্তির বেস্ট সেলার প্রিপারেশন গাইডগুলো আরেকবার দেখে নাও
*কলেজে ভর্তির প্রিপারেশন তুমি কিভাবে নিচ্ছো? তোমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করো কমেন্ট বক্সে আর এই ব্লগটাও শেয়ার করে বন্ধুদের দেখিয়ে দাও।