গুপ্তসংঘের গোপন কোঠরে ( পর্ব- ১)

গুপ্তসংঘের গোপন কোঠরে যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম!
গুপ্তসংঘ - গোপন সংঘ

গুপ্তসংঘগুলোর কথা আমরা শুনে আসছি  বহুকাল বহুদিন ধরেই। তবে হদিস যেন মেলেনা। হদিস যদি মিলেই যেতো, তবে তো আর গোপন সংঘ হতোনা। বহুকাল ধরেই তো এমন দাবি আছে যে, পুরো পৃথিবীর কলকাঠি পেছন  থেকে নাড়ছে গুপ্তসংঘগুলো। বই পুস্তক, গবেষণা আর বিশেষজ্ঞ মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে  যতোখানি গোপনে-গভীরে পৌঁছানো যেতে পারে, আপনার অদম্য জানার স্পৃহাকে নিবৃত করতেই আমাদের সিরিজ আয়োজন “গুপ্তসংঘের গোপন কোঠরে”।
কেউ কেউ ভাবে , এরকম সব গুপ্তসংঘ সমাজের জন্য হুমকি! আবার কারো কারো ভাবনা, সমাজের জন্য আসলে এমন গোপন সংঘের দরকারও আছে। এ নিয়ে জানার কোন শেষ নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নিয়মিতভাবে প্রভাবিত করতে পারে, করে চলছে, এমন গোপন সংঘ তো খুঁজে দেখাই দরকার!

জ্ঞান উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কুক্ষিগতো করে রাখার উদ্দেশ্যে গুপ্তসংঘ শুধু একালে নয় বরং সবকালেই ছিল! আরব সমাজ তো একটা সময় এসব গুপ্তসংঘের ব্যাপারে অসম্ভব রকমের আগ্রহী ছিল, বিশেষ করে পশ্চিমা গুপ্তসংঘগুলোর ব্যাপারে।

গুপ্তসংঘগুলো খুবই গোপনীয়ভাবেই ভাগ ভাগ করা, প্রকোষ্ঠবদ্ধ। কিন্তু সেসবের উপরেও একটা স্তর আছে। এবং ওই স্তরটাই সবকিছু। আসল নিয়ন্ত্রণটা ওখানেই।

ম্যাসনিক সিম্বলিজমকে ভিত্তি করেই নাকি ঢেলে সাজানো হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিকে, এমন দাবিও ছিল। যাই হোক, গুপ্তসংঘগুলোর কি আদতেই কোনো অস্তিত্ব আছে? এই গুপ্তসংঘের লোকেরাই কী ছায়ার আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে পৃথিবী? মুক্তচিন্তক বলেই আপনারও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আছে নিশ্চিত! নাম্বার , শেইপ, পদার্থবিজ্ঞান, সাহিত্য এসবেও আপনার আগ্রহ থাকতে পারে। আবার গল্পও ভালো লাগতে পারে আপনার! রহস্যোপন্যাস ভালোবাসে এমন মানুষের সংখ্যাটাও বেশিই, উল্লেখযোগ্য।
থ্রিলার, রহস্য এসব যদি আপনার ভালো লাগে তবে ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসন এবং অন্যান্য গুপ্ত সংঘ যেগুলো বহুকাল ধরে অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি আছে, সেসব গুপ্তসংঘের ব্যাপারেও আপনার জানার আগ্রহ থাকবেই এবং এটাই স্বাভাবিক

একটু পড়ে দেখতে পারেন- গুপ্তসংঘ- নিক হার্ডিং

এমন কিছু অভিযুক্ত রেকর্ড আছে  (প্রমাণ হিসেবে দাবি করা হয়, তবে সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে), যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, গুপ্তসংঘের সদস্যরা  পৃথিবীর দেশে দেশে সরাসরিভাবেই শাসনকার্য পরিচালনায় যুক্ত হয়েছিলেন। তাছাড়াও সেসব রেকর্ডে  আরো উল্লেখিত আছে গুপ্তসংঘের নিয়মিত বৈঠকে চর্চা হতো এমন  অদ্ভূত সব প্রথা নিয়েও।
আদতে এই গুপ্তসংঘগুলো কী? কারা এরা? এদের কি আসলেই কোন অস্তিত্ব আছে? এদের উদ্দেশ্য কী আসলে?

এ ব্যাপারে জানতে গেলে, আপনি হারিয়ে যাবেন, সত্যিই হারিয়ে যাবেন। হারিয়ে যাবেন সেসব গুপ্তসংঘগুলোর মাঝে। কুল-কিনারা করা মুশকিল হয়ে উঠবে। প্রত্যেকটা গুপ্তসংঘেরই আলাদা আলাদা নিজ নিজ নিয়ম-কানুন আছে, প্রথা আছে, উদ্দেশ্য আছে।

আরও পড়ুন- ইলুমিনাতি-এজেন্ডা ২১- জিল হেন্ডারসন

ফ্রিম্যাসন, ইলুমিনাতি, রোসিক্রুশান, স্কাল অ্যান্ড বোনস এবং এছাড়াও আমরা যেগুলোর কথা শুনে থাকি, এবং যেগুলোর কথা আমরা কখনোই শুনিনি, জানবেন তাঁদের ব্যাপারে?
আচ্ছা, তবে এই গুপ্তসংঘের ব্যাপারে জানাশোনা আছে-বিশদ গবেষণা আছে এমন একজন পন্ডিত, ডেভিড আইকের কথাই জেনে দেখা যাক প্রথমে। ডিকোডেডকে আইক গুপ্তসংঘগুলোর উৎপত্তির ব্যাপারে জানিয়েছেন,

হ্যাঁ, সবসময়ই গুপ্তসংঘ ছিল, অন্ততপক্ষে  অতীতের যতোদিন পর্যন্ত আমরা  খোঁজ রাখতে পেরেছি আর কি! সবসময়ই কোনো জাতি বা গোষ্ঠীতে এমন কিছু মানুষ থাকতোই যারা কিনা সবসময় গোপন কিছুর পেছনে ছুটতো। বিশেষ করে, কিছু বিশেষ  কিছু জ্ঞান নিজেদের  মধ্যেই গোপনীয় রাখার চেষ্টা করতো। এমন যদি হয় যে, আমার কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোনো জ্ঞান বা জ্ঞানের আঁধার আছে , যেটা আপনার কাছে নেই, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে, আমি ইতোমধ্যেই আপনার থেকে শক্তিশালী একটা অবস্থানে আছি।

এর মাধ্যমে গুপ্তসংঘের অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা উদ্দেশ্য অন্তত পরিষ্কার হয় যে,বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জ্ঞান জনসাধারণের থেকে লুকিয়ে রাখাই এদের প্রধান এবং অন্যতম উদ্দেশ্যগুলোর একটি।

গুপ্তসংঘের উৎপত্তি নিয়ে বিশদ জানতে পড়ে দেখুন

আইক আরো জানান, আমরা এমন একটা দুনিয়াতে বাস করি, যে দুনিয়াটা আসলে দুইটা আলাদা দুনিয়ার মিলিত সামগ্রিক রূপ।একটা দুনিয়া আছে, যে দুনিয়ায় সাধারণ জনগণ বসবাস করে এবং  এ দুনিয়ার জ্ঞান এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ। এদের জন্য যেটুকু জ্ঞান রয়েছে, এতোটুকুই এদের সম্বল। অর্থাৎ, এদের ন্যুনতম যে জ্ঞানটুক দরকার। তবে এর বাইরেও জ্ঞান আছে, আছে পুরোপুরি ভিন্ন আরেক জগৎ। যে জগৎ শুধুই গুপ্তসংঘ ঘেরা…

গুপ্তসংঘের সদস্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকা  জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গোপনভাবেই স্থানান্তরিত হচ্ছে। আন্তঃ প্রজনন জারি রাখা পরিবারের মতো। গভীর থেকে গভীরে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শাসন করে যাওয়া কোনো এক সাম্রাজ্যবাদী একপেশে পরিবারের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ক্ষমতা চর্চায় ব্যবহৃত হওয়া জ্ঞান আর প্রথার মতো…
ফ্রিম্যাসনস গুপ্তসংঘের মতো সংঘগুলোর সদস্য হওয়ার অর্থই কি তবে এমন কিছু জ্ঞানের নাগাল পাওয়া , যা অন্য কারো কাছে নেই!

বিস্তারিত জানতে পড়ুন- গুপ্তগোষ্ঠী ফ্রিম্যাসনারির কথা

আরও পড়ুন- ফ্রিম্যাসন

গুপ্তসংঘগুলো খুবই গোপনীয়ভাবেই ভাগ ভাগ করা, প্রকোষ্ঠবদ্ধ। যদি আপনি ফ্রিম্যাসনদের কথাই বিবেচনা করেন, ফ্রিম্যাসনদের তিন স্তরের ডিগ্রীর কথা হয়তো আমরা জানি, ওই যে, তথাকথিত ব্লু ডিগ্রী নামে।
কিন্তু এমন তো মোট ৩৩ টা স্তর আছে। আর ওই তিন স্তরের পরের প্রথম স্তর থেকে পরের স্তরে প্রত্যাবাসনের মানেই হচ্ছে শুধুমাত্র পরবর্তী স্তরের জ্ঞান, শক্তি আর সেসব জ্ঞানের নিয়ন্ত্রকদের নাগাল পাওয়া। এরপর যদি সেই নিয়ন্ত্রকদের মনে হয় যে আপনি এর পরবর্তী স্তরে পদার্পণের জন্য যোগ্য কিংবা প্রস্তুত, কিংবা আপনি এমন কেউ যার আসলে ওই স্তরের নাগালটুকুও থাকা উচিত, শুধুমাত্র তবেই আপনার পক্ষে ওই লেভেল পেরোনো সম্ভব। তখন আপনিও হয়তো পুরোপুরি ফ্রিম্যাসন না হলেও ফ্রিম্যাসনসদের একটা অংশ , আপনার কাছেও জেসুট অর্ডার আছে। আচ্ছা, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কী এসব গুপ্তসংঘের কোন সংযোগ থাকতে পারে।

বিশদ জানতে পড়ুন- ইলুমিনাতি ও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ

খেয়াল করলেই দেখবেন, এই ফ্রিম্যাসন বলুন আর নাইট টেম্পলারদের কথাই বলুন, প্রত্যেক গুপ্তসংঘই নিজ নিজ জায়গায় নিয়ন্ত্রণ পিরামিডের প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। একদম সেই প্রধান নিয়ন্ত্রক স্তর থেকে শেষ তিন স্তর পর্যন্ত এভাবেই গোছানো নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত। এবং সে প্রধান নিয়ন্ত্রক স্তরের উপরেও রয়েছে একটি স্তর, যে স্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো অস্তিত্বই নেই। এবং আসল খেলাটা এখানেই।

বাকি অংশ পড়ুন পরবর্তী পর্বে।

 

Niaz Mahmud Sakib

Niaz Mahmud Sakib

লেখকের পরিচয় সত্যি সত্যিই তাঁর গেঁথে রাখা শব্দগুলোতে, কাজে-কর্মে এবং ধারণ করা আদর্শে!

Leave a Comment

Rokomari-blog-Logo.png
Join our mailing list and get the latest updates
Loading