ট্রেন্ডি হতাশার এই মৌসুমটাতে স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজেকে হতাশ প্রমাণের চেষ্টায় ব্যস্ত না রাখাটাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। হতাশা বিলাপের সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে মোটিভেশনাল বই পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন হতাশার মতো ক্ষতিকর ব্যধি থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব, তেমনি আত্নোন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করাও সম্ভব। এখানে নয়টি মোটিভেশনাল বই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেওয়া হল।
১. দ্য স্যাভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি এফেক্টিভ পিপল
ধর্মোপদেশ বা নীতি উপদেশ বিস্তৃতি ভালবাসলেও Steven Covey’র জীবন সম্পর্কিত নির্দেশনা আপনাকে শুধু ভালো অভ্যাস বিকাশ ঘটাতেই সাহায্য করবে না- একই সাথে এটাও বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, এসব অভ্যাসের অর্জনই পারে আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।

সেরা উদ্ধৃতি:
“একটি চিন্তার বীজ বপন করো, একে কাজে পরিণত করো; একটি কাজের বীজ বপন করো, একে অভ্যাসে পরিণত করো; একটি অভ্যাসের বীজ বপন করো, একে নিজের চরিত্রে রূপান্তর করো; চরিত্রের বীজ বপন করো, একে নিজের লক্ষ্য হিসেবে গড়ে তোলো।”
২. থিংক এন্ড গ্রো রিচ
কী ধরণের সাধারণ চিন্তা প্রক্রিয়া এবং আচরণ মানুষের সফলতার নেতৃত্ব হিসেবে কাজ করে তা উদঘাটন করার জন্য Napoleon Hill (নেপোলিয়ন হিল) ৪০ জন লাখপতির সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। সর্বোত্তম কার্য্যাভ্যাসের উপর তাঁর গবেষণা সেসব ক্ষেত্রে ছিল বিপ্লবী যেখানে মহামূল্যবান সম্পদকে লোভ এবং ভাগ্যের সংমিশ্রণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

সেরা উদ্ধৃতি:
“আপনার জীবনে যেসব নতুন সুযোগ বা পথের দরকার তার সবটুকুই আপনার কল্পনায় অপেক্ষমান। কল্পনা হল মনের কর্মক্ষেত্র যা মানসিক শক্তিকে নৈপুণ্য এবং সম্পদে রূপান্তর করতে সক্ষম।”
৩. Awaken the Giant Within
বেশিরভাগ অনুপ্রেরণাদায়ী লেখকদের সাথে Anthony Robbins এর পার্থক্য হল, প্রথমত: তিনি মন এবং শরীরের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নৈতিক দায়িত্ববোধের চেয়ে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই বেশি দেখেন। দ্বিতীয়ত, কোন না কোন ভাবে তিনি একই সাথে গ্রহের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী মডেল এবং সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনা করেন!

সেরা উদ্ধৃতি:
“If you can’t, you must. If you must, you can.” অর্থাৎ, “যদি আপনি অপারগ হন, তবে আপনাকে অবশ্যই করতে হবে; যদি আপনাকে অবশ্যই করতে হয়, তাহলে আপনি পারবেন।”
৪. অ্যাস আ ম্যান থিংকথ
মোটিভেশনাল বইগুলো সাধারণত অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে আলোকপাত করে। কিন্তু ১৯০২ সালে, James Allen এর এই রচনাটি চিন্তাশীলতার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছে। আপনাদের চিন্তা কিভাবে আপনাদের ব্যক্তিত্ব গঠন করে এবং সেই ব্যক্তিত্ব, কিভাবে ও কী ধরণের পদক্ষেপ আপনি গ্রহণ করবেন, সেদিকে পরিচালিত করে- এই রচনা সেই ব্যাখ্যাই করেছে।

সেরা উদ্ধৃতি:
“স্বপ্নবাজরাই পৃথিবীর ত্রাণকর্তা। যেহেতু এই দৃশ্যমান পৃথিবী অদৃশ্যের দ্বারাই টিকে আছে, তাই মানুষ তাদের যাবতীয় সকল পরীক্ষা, পাপ এবং নোংরামির মাঝেও নীরব স্বপ্নদ্রষ্টাদের সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা পুষ্ট হয়। ”
৫. দ্য গ্রেটেস্ট সেলসম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড
বাইবেলের ভুল দৃষ্টান্ত আপনার নিজেকে এবং অন্যকে সাহায্য করার ব্যাপারে নিজের সক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। বিক্রেতাদের জন্য এটি অবশ্য পাঠ্য যেটা প্রায় সবার সাথে সম্পর্কিত।

সেরা উদ্ধৃতি:
“আজকের দিনটা আমি এমনভাবে বেচে থাকবো যেন এইটাই আমার শেষ দিন। এই দিনটাই এখন আমার সবকিছু এবং এই ঘন্টাগুলোই আমার অসীমতা। এই সূর্যোদয়কে আমি আনন্দের অশ্রু দিয়ে স্বাগত জানাই ঠিক সেই বন্দীর মতো যে মৃত্যুর আদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে। নতুন দিনের এই অমূল্য উপহারের জন্য আমি হাত তুলে ধন্যবাদ জানাই!”
৬. দ্য মিরাকল মর্নিং
আপনি কি প্রস্তুত জীবনকে পরের ধাপে উন্নীত করার জন্য? আপনার ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত জীবনের পরবর্তী ধাপ কোনটা? জীবনের ঠিক কোন পরিবর্তন আনলে আপনি সেই ধাপে উন্নীত হবেন? মাত্র ৩০ দিনে কাক্সিক্ষত দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার সুযোগ নিজেকে উপহার দিন। এক দিন এক দিন করে শুরু করুন। আপনার অতীত যা-ই হোক না কেন, আপনি আপনার ভবিষ্যতে পরিবর্তন আনতে পারবেন বর্তমানকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে। বর্তমানে আপনি আপনার অতীতের কর্মফলের প্রতিচ্ছবি। ঠিক তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে আপনি কী হতে চান সে ব্যাপারে এই মুহূর্তের সিদ্ধান্তের ওপর। এই মুহূর্তটা আপনার। পরবর্তী দিনের সুখ, স্বাস্থ্য, সম্পদ, সাফল্য, ভালোবাসা – যা আপনার প্রাপ্য তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। অপেক্ষা করবেন না, শুরু করুন। কালই। আগামীকালই হোক সেই স্মরণীয় দিন – যেদিন আপনি এতদিনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের যাত্রা শুরু করবেন।

সেরা উদ্ধৃতি:
“ভয়ের কিছুই নেই, কারণ- তুমি ব্যর্থ হবে না। জানো, বড় হও, নিজেকে ছাড়িয়ে যাও।”
৭. লার্নিং হাউ টু ফ্লাই (লাইফ লেসনস ফর দি ইয়ুথ)
এ পি জে আবদুল কালাম ২০০২ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব, “ভারতরত্ন” লাভ করেন। অধিকন্তু, তিনি “পদ্মভূষণ” এবং “পদ্মবিভূষণ” খেতাব লাভ করেছিলেন। ‘লার্নিং হাউ টু ফ্লাই’ তাঁর উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থ, যাতে তরুণদের জন্য আছে অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় কথামালা। তারুণ্যের প্রজ্জ্বলিত মনে আজীবন জ্ঞান সাধনার বীজ কেমন করে বপন করতে হবে, কিভাবে উড়তে পারা যাবে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার ডানায় ভর করে, এমন সব অসাধারণ বিষয়বস্তুতে ভরপুর বইটি

সেরা উদ্ধৃতি:
“ইতিহাস প্রমাণ করেছে, অসম্ভবকে কল্পনা করার সাহস যারা দেখিয়েছে, মানবতার সকল সীমাবদ্ধতা তারা ভাঙতে পেরেছে।”
৮. দ্য পাওয়ার অব্ পজিটিভ থিংকিং
এই বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন মনোবিজ্ঞানীরা এবং ধর্মতত্ত্ববিদেরা সবাই বইটিকে প্রচলিত মতবিরোধী হিসেবে আক্রমণ করেন এবং লেখক Norman Vincent Peale কে খামখেয়ালি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু বর্তমানে, আশাবাদী হওয়া আপনাকে স্বাস্থ্যবান ও সুখী করে এবং আরো বেশি সফল করে- যা বইটির মূল ভিত্তি তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত।

সেরা উদ্ধৃতি:
“কর্মপদক্ষেপ আত্মবিশ্বাসের একটি দুর্দান্ত পুনরুদ্ধারকারক এবং গঠক। নিষ্ক্রিয়তা শুধু ভয়-এর ফলাফলই নয়, কারণও বটে! হয়তো আপনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, তা সফল হবে; হয়তো বিভিন্ন পদক্ষেপ অথবা সমন্বয় অনুসরণ করতে হতে পারে। কিন্তু যেকোন পদক্ষেপ একেবারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার চেয়ে ঢের ভালো!”
আরও পড়ুন-সফলতার গোপন রহস্য ৮টি!
জনপ্রিয় আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলো দেখুন
1 thought on “চিন্তার জগৎ পাল্টে দিতে পারে যে ৮টি বই”
Pingback: "মোটিভেশানাল বই পড়া, সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই না" - রকমারি ব্লগ