একাকীত্ব, মানসিক এক যন্ত্রণার নাম। যান্ত্রিক এই জীবনে মাঝেমাঝেই একাকীত্বের সম্মুখীন হতে হয় সবাইকে। ভেতরটা কুড়েকুড়ে খাওয়াই যেন তার প্রিয় কাজ। এই যন্ত্রণা যে কতটা ভয়ংকর সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই অনুধাবন করতে পারে না। সুযোগ পেলেই এটি আমাদের মস্তিষ্কে ভর করে, মনকে দুর্বল বানিয়ে ফেলে। দূরে ঠেলে দেয় মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকেও। ক্ষতি বয়ে আনে মানসিক ও সামাজিক জীবনে।
একাকীত্ব নামক যন্ত্রণাটি দূর করার একমাত্র উপায় মনটাকে ব্যস্ত রাখা, কোনো না কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করা। সেজন্য বই-ই হতে পারে আপনার যোগ্য সঙ্গী। যা কষ্টে জর্জরিত মনকে রাঙিয়ে দিতে পারে, চাঙ্গা করে দিতে পারে।
যে ৬টি বই পড়ে আপনি উদযাপন করতে পারেন একাকীত্ব
কাহিনি-সংক্ষেপ:
পাভেল। ছোট্ট মানুষ। নিজেকে ভালবাসে। স্বপ্ন দেখে বড় হবার, প্রতিষ্ঠিত হবার, ভাল কিছু করার। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র পাভেলের মা পেলেগিয়া। যিনি সারাদিন কারখানায় অমানসিক পরিশ্রম করে বাসায় ফেরেন। এবং প্রতিরাতে তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হন। এভাবেই কুড়ি বছর কেটে যায়। একদিন পাভেলের বাবা মিখাইল ভ্লাসভেরের মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর ছোট্ট পাভেল কারখানায় যোগ দেয়। সেখানে সে শেখে কী করে সর্বহারা জনগণ সমষ্টিগতভাবে শক্তিধর হতে পারে। সে বুঝতে পারে শ্রমিকগণ সমাজ পরিবর্তনের মুখ্য উপাদান। ফলে সে তার বাড়িতে কমরেডদের নিয়ে নানা গবেষণার কাজ ও বই-পড়া চালিয়ে যায়। এ সকল কাজে সবসময় তার মা তাকে সাহায্য করে।
এই উপন্যাসে মূলত শ্রমিক শ্রেণীতে নারীর ক্ষমতায়ন দেখানো হয়। পাশাপাশি দেখানো হয় কীভাবে লেনিনের বিখ্যাত লাল মলাটের বই পড়ে সবার মাঝে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। লেনিনের চেতনা নিয়েই চা বাগানের শ্রমিকেরা রাশিয়াতে বিপ্লব ঘটান। এটি সম্পূর্ণ একটি বাস্তব কাহিনি। বইটির সাথে আপনার ভালোই সময় কাটবে।
কাহিনি-সংক্ষেপ:
রামসুন্দর নামের এক লোক। যার তিন ছেলের পর এক মেয়ে-সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয় নিরুপমা। একসময় তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। মুখোমুখি পড়তে হয় যৌতুক নামক ব্যাধির। কিন্তু বর যৌতুকের ধার সইতে না ধেরে পিতার অবাধ্য হয়ে বিয়েটা করে। তারপর কী হয়? জানতে হলে বইটির স্পর্শ নিতে হবে।
এটি বইয়ের একটি গল্পমাত্র। এই বইয়ে আরও গল্প আছে। প্রতিটি লেখাই আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
কাহিনি-সংক্ষেপ:
সুন্দরপুর। উত্তরবঙ্গের ছোট একটি শহর। সেখানে আছে এক রহস্যময় হোটেল। নাম- রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি। একজন তথাকথিত সাংবাদিক এই হোটেলটিতে এসে এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করেন। দেখেন যে হোটেলটির মালিক একজন নারী এবং যিনি কীনা আরো বেশী রহস্যময়ী। ধীরেধীরে জানা যায় সেই তথাকথিত সাংবাদিক ডিবির এক জাঁদরেল কর্মকর্তা। শুধু তাইই নয়, এখন পর্যন্ত সকল কেসে সফল হয়েছেন। এখানে এসেছেন নিখোঁজ কিছু মানুষ খুঁজতে। হোটেল মালিক মুশকান জুবেরিকে তার সন্দেহ কিন্তু এই মহিলার সাথে দেখা হওয়ার পরই সব বদলে গেল। কূলকিনারা করতে পারছিলেন না কিছুরই। তাহলে কি তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবেন? নাকি পারবেন রহস্যের জাল ভেদ করতে? জানতে হলে বইটির ঘ্রাণ নিতে হবে। উপন্যাসটি আপনার মনকে আলোড়িত করবে।
কাহিনি-সংক্ষেপ:
শিল্পি জাহেদ। আর্ট স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল। মাদার আর্থ বা বসুন্ধরা তার একটি শিল্পকর্মের নাম। করাচীর এক এক্সিবিশনের তেইশ নাম্বারে থাকা ‘বসুন্ধরা’ শিল্পকর্মটি প্রথম হয়। এমন প্রেক্ষাপট দিয়েই বইটির শুরু।
জাহেদ খুব বড় মাপের কোনো শিল্পী হতে চায়নি। চেয়েছে খুব সাধারণ একটি মেয়ের সাথে আটপৌরে অসাধারণ হয়ে বেঁচে থাকতে। এই ‘বসুন্ধরা’ শিল্পকর্মটির প্লট জাহেদ ভেবে রাখে অনেক আগ থেকেই। কিন্তু সেটি অংকন করার জন্য তাকে কিছুকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে। তারপর একরাতে সে তার সেরা শিল্পকর্ম আঁকার মাহেন্দ্রক্ষণ পেয়ে যায়। তারপর? জানতে হলে বইটিতে মনোনিবেশ করতে হবে। উপন্যাসটি পড়ে আপনি বিমোহিত হবেন।
কাহিনি-সংক্ষেপ:
গল্পের নায়কের নাম মহেন্দ্র। গ্রামের সহজ- সরল, আত্মসচেতনতাসম্পন্ন সাধারণ এক যুবক। অভাবের কারণে বেশি পড়াশোনা করার সুযোগ হয় নি। কোনরকমে ম্যাট্রিক পর্যন্ত যেতে পেরেছে। বাবা-মা কেউ নেইই সংসারে। থাকার মধ্যে আছে শুধু দাদা দেবেন্দ্র, বউদি অপর্ণা আর এক ভাইপো খোকন। এদের নিয়ে মহেন্দ্রর জগৎ।
এক সময় মহেন্দ্রদের পরিবার অনেক স্বচ্ছল ছিলো। কিন্তু কালের নিষ্ঠুরতায় আজ তাদের, দিন আনে দিন খায়- অবস্থা। নিজের জন্য ভাবে না মহেন্দ্র কিন্তু একমাত্র ভাইপোর খেতে না পাওয়ার কষ্ট, ভালো করে থাকতে না পাওয়ার কষ্ট মানতে পারেনা সে। দাদা দেবেন্দ্রও বসন্ত রোগে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন।
অনেক চিন্তাভাবনা করে ঠিক হয় মহেন্দ্র শহরে আসবে। উমেশবাবুর কাছে। উমেশবাবু মাহেন্দ্রর বাবা ক্ষেত্রনাথের বন্ধু। মহেন্দ্র এবং দাদা দেবেন্দ্র খুব চিন্তায় ছিলেন উমেশবাবু মহেন্দ্রকে ভালো চোখে দেখেন কিনা কিংবা মহেন্দ্রকে কোন কাজের ব্যবস্থা করে দেন কিনা।
উমেশবাবু মহেন্দ্রকে কাজের ব্যবস্থা শুধু করে দিবেন বলে আশ্বাসই দিলেন না, নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থাও করে দিলেন। শুরু হয় মহেন্দ্রর নতুন জীবনযাপন।
এখানে এসেই পরিচয় হয় মাধুরীর সাথে। মাধুরী উমেশবাবুর একমাত্র মেয়ে। তিন ভাইয়ের এক বোন মাধুরী। ভীষণ আদরের।
উমেশবাবুর বাড়িতে এই মাধুরীই হয়ে গেল মহেন্দ্রর সবচেয়ে কাছের মানুষ, ভালো বন্ধু। এক সময় মহেন্দ্র আবিষ্কার করলো মাধুরীর প্রতি তার দূর্বলতা। নিজের অবস্থান আর মাধুরীর অবস্থান সকল কিছু বুঝেও মহেন্দ্র দূর্বল হয়ে পড়ে মাধুরীর উপর।
এমনকি মাধুরী নিজেও এই গেয়ো ছেলেটাকে ভালবাসতে শুরু করে। মাধুরী জানে বাবা এবং দাদাদের সে যা বলবে তাই হবে। এটা মহেন্দ্র নিজেও জানে। তবুও কোন এক অজ্ঞাত কারণে মহেন্দ্র পালিয়ে যায় মাধুরীর কাছ থেকে। কিন্তু কেন মাধুরী জানে না। অনেক চেষ্টা করেও মহেন্দ্রর খোজঁ আর পায় না মাধুরী।
দুজন দুজনকে ভালবাসে তবুও কেন পালিয়ে গেলো মহেন্দ্র? শুধু কি নিজের আর্থিক দৈন্যতা, নিজের অক্ষমতা? নাকি আরো কোন কারণ ছিলো?
কাহিনি-সংক্ষেপ:
বইটির প্রধান চরিত্র দিপু। সবাই তাকে চেনে দিপু নাম্বার টু বলেই। মাকে দেখেনি সে। বাবাটাও অন্যরকম, ঠিক যেন সমবয়সী বন্ধু। ইশকুলে মারামারি করে আসলে যিনি বকা দেন না। উপন্যাসের আরেকটি চরিত্র তারিক। সে প্রথমে দিপুর ভীষণ শত্রু থাকে। একবার দিপুকে পিটুনি পর্যন্ত দিয়েছিল। ঘটনার পরিক্রমায় তারিক আর দিপুর মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
পড়াশোনায় ফাঁকিবাজ থাকে তারিক। কিন্তু অন্য সবকিছুতে তুখোড় সে। একদিন তারিক আবিষ্কার করে ফেলে এক গুপ্তদালান। যেখানে আছে ভয়ংকর মূর্তি, প্রাচীন পাত্র আর অদ্ভুদ সব জিনিস দিয়ে ভরা। কী সেই গুপ্তপুরীর আসল রহস্য? কী ছিল তাদের অভিযান যা সারাদেশে সাড়া ফেলেছিল? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। এটি আপনার একাকীত্ব কে মলিন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন বিখ্যাত ১০ লেখকের বিচিত্র এই অভ্যাসগুলো আপনি জানেন কি?
1 thought on “একাকীত্ব উদযাপন করতে পারেন যে ৬টি বই পড়ে!”
Pingback: এই সায়েন্স ফিকশন বই গুলো পড়বেন না। কারণ, এগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল ! - রকমারি ব্লগ