হুমায়ূন আহমেদ – কথাসাহিত্যিক, পরিচালক, ঔপন্যাসিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এক অলংকার। জীবনে বহু মানুষকে আপন করে নিয়েছেন লেখক। নিজের এক অন্য পৃথিবী ছিল তার। যে পৃথিবীজুড়ে ছিল তার ভালোবাসার মানুষগুলো। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু, তিনি তো লেখক ছিলেন। তাই লেখকের মৃত্যু হলেও তার ভালোবাসার মৃত্যু হয়নি। নিজের বইয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষদের নাম লিখেছেন, তাদেরকে উৎসর্গ করেছেন। যেই উৎসর্গপত্র এখনো রয়ে গেছে ছাপা অক্ষরে। ভালোবাসা ছড়াচ্ছে সেগুলো, ছড়াবে আজীবন। এমন কিছু শ্রেষ্ঠ উৎসর্গপত্রের উপরে আজ একবার চোখ বুলিয়ে আসা যাক!
হুমায়ূন আহমেদের সেরা ১০০ উৎসর্গ
১। নন্দিত নরকে
নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের।
২। রূপার পালঙ্ক
একবার একজন লেখক আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আমাদের তিনকন্যা যেযেখানে ছিলো, লেখকের নাম শুনে উড়ে চলে এলো। আমার মেজো মেয়ে বলল, এতো বড় লেখকের সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার না-কি পা ঝিমঝিম করছে। আমি তখন লেখককে দেখছিলাম না, মুগ্ধ হয়ে আমার তিনকন্যার উচ্ছ্বাস দেখছিলাম।সেই লেখকের নাম-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩। বাসর
স্নিগ্ধা করিম
আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে। বই উৎসর্গ করা হলো।
আমার তিন কন্যা বিপাশা, শীলা, নোভা।এরা ভূত বিশ্বাস করে না, কিন্তু ভূতের ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় তিন কন্যা ঠাসাঠাসি করে এক বিছানায় ঘুমুচ্ছে, কারণ কেউ একজন ভয় পেয়েছে।
তার নাম রোমেল। আমি তাকে রহস্য করে ডাকি ত্রুস্ক, রাশিয়ান সাবমেরিন ত্রুস্ক, নাবিকদের নিয়ে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ত্রুস্ক। রোমেলকে দেখলেই আমার কেন জানি তলিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের কথা মনে হয়। সে পড়াশোনা করেছে রাশিয়ায়। রুপবতী এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি রাশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের পুতুলের মতো একটা ছেলে আছে। রোমেল তার রাশিয়ান পরিবার নিয়ে পাবনায় বাস করছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু সে জীবন নির্বাহ করছে পত্রিকা বিক্রি করে। আখতারুজ্জামান রোমেল (ত্রুস্ক)
৬। ফাউন্টেনপেন
ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি। তার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। দশজন কিংবা বারোজন না হয়ে ক্রিকেট কেন এগারজনের খেলা?
৭। তিন বিচিত্র
আমার একজন কার্ডিওলজিস্ট বন্ধু আছেন, তাঁর কাছে যখনি যাই তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন, “আপনার তো দিন শেষ।” কোন ডাক্তার কে এত সহজে দিন শেষের কথা বলতে আগে শুনিনি। আমি মুগ্ধ! প্রফেসর বরেন চক্রবর্তী ভালোমানুষেষু
ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি?
৯। বহুব্রীহি
জনাব আবুল খায়ের, অভিনয় যাঁর প্রথম সত্তা, অভিনয় যাঁর দ্বিতীয় সত্তা
১০। ছেলেবেলা
বড়মামা শেখ ফজলুল করিম, যিনি এই পৃথিবীতে খুব অল্প আয়ু নিয়ে এসেছিলেন সেই অল্প আয়ুর সবটাই খরচ করে গেলেন আমাদের পেছনে।
১১। হিমুর নীল জোছনা
বাষট্টি বছর বয়েসী কঠিন হিমু কেউ কি দেখেছেন? আমি দেখেছি। তার নাম সেহেরী। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তিনি শুধু যে হলুদ পাঞ্জাবি পরেন তা-না, তিনি নিজের চুল-দাড়ি সবই মেহেদি দিয়ে হলুদ করে রাখেন। পূর্ণিমার রাতে আয়োজন করে জোছনা দেখতে গাজীপুরের জঙ্গলে যান সৈয়দ আমিনুল হক সেহেরী (হিমু, ফার্স্টক্লাস)
নিষাদের পাঁচ তলার চাচী এবং মোটু চাচুকে (এই দু’জন মনে করেন নিষাদ মানব সন্তান না, দেবশিশু। মনে হয় এদের মাথায় কোন সমস্যা আছে।)
১৩। আসমানীরা তিন বোন
আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে। প্রণব ভট্ট।
তিনি সব সময় হাসেন। যতোবার তাঁকে দেখেছি, হাসিমুখ দেখেছি। আমার জানতে ইচ্ছা করে জীবনে কঠিন দুঃসময়ে তিনি যখন কলম হাতে নিয়েছিলেন তখনও কি তাঁর মুখে হাসি ছিলো? সর্বজন প্রিয় আমাদের রাবেয়া খাতুন
১৫। তোমাদের এই নগরে
এ.এফ.এম. তোফাজ্জল হোসেন। এই মানুষটি জীবনে কোন কিছুই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেনি নি। তবু তাঁর বন্ধুরা তাঁকে আদর করে ডাকে- চ্যালেঞ্জার।
১৬। নীল অপরাজিতা
শুক্লাদি করকমলে
আমার হৃদয় নামক পাম্পিং মেশিনে কিছু সমস্যা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্যে মাঝে মাঝে আমাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে যেতে হয়। তখন এক প্রবাসী গল্পকার ছুটে আসেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেন আমাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে। শহীদ হোসেন খোকন স্বস্তিকারকেষু
২০। বৃষ্টি ও মেঘমালা
মধ্যদুপুরে অতি দীর্ঘ মানুষের ছায়াও ছোট হয়ে যায়। অধ্যাপক তৌফিকুর রহমানকে। যাঁর ছায়া কখনো ছোট হয় না।
২১। হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস
ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে ভালোবাসা …….গুলতেকিনকে
২২। কোথাও কেউ নেই
কাজী হাসান হাবিব, হে বন্ধু, হে প্রিয়
২৩। দারুচিনি দ্বীপ
মা মনি নোভা আহমেদ,
এই উপন্যাসের পান্ডুলিপির প্রথম পাঠিকা নবম শ্রেণীর বালিকা আমার বড় মেয়ে নোভা আহমেদ। সে বই শেষ করেই আমাকে বললো, আমার যখন একুশ বছর বয়স হবে তখন কি তুমি আমাকে এই বইয়ের নায়িকার মতো একা একা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড যেতে দেবে? আমি বললাম- না।
সে কঠিন গলায় বলল, তাহলে তুমি এই বইয়ে মিথ্যা কথা কেন লিখলে? আমি তার অভিমানী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে বাধ্য হলাম-আচ্ছা যাও তোমাকেও যেতে দেবো।
২৪। লিলুয়া বাতাস
দীর্ঘদিন কেউ আমার পাশে থাকে না, একসময় দূরে সরে যায়। হঠাৎ হঠাৎ এক আধজন পাওয়া যায় যারা ঝুলেই থাকে, যেমন অভিনেতা ফারুক। লিলুয়া বাতাস বইটি তার জন্যে। পরম করুণাময় তার হৃদয়ে লিলুয়া বাতাস বইয়ে দেবেন, এই আমার শুভ কামনা।- ফারুক আহমেদ-সুকনিষ্ঠেষু
২৫। কালো যাদুকর
জুয়েল আইচ, জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন। এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন। ইনি নামতে ভুলে গেছেন।
ওয়াহিদ ইবনে রেজা(বাপ্পি)বড় কবিরা পারবারিকভাবে অসুখি হন।বাপ্পি একজন বড় কবি এটা জেনে ভালো লাগছে।সে আরো বড় কবি হোক, এই শুভ কামনা।
২৭। যদিও সন্ধ্যা
বইটা অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে “অভিনেতা হিসেবে A+, মানুষ হিসেবে A++”।
২৮। সে আসে ধীরে
মৃত্যুর কাছাকাছি যাবার মতো ঘটনা আমার জীবনে কয়েকবারই ঘটেছে। একবারের কথা বলি। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে- আমাকে নেয়া হয়েছে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। আমি চলে গিয়েছি প্রবল ঘোরের মধ্যে, চারপাশের পৃথিবী অস্পষ্ট। এর মধ্যেও মনে হচ্ছে হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক আমার পাশে বসে। কে সে? হিমু না-কি? আমি বললাম, কে? যুবক কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, হুমায়ূন ভাই, আমি স্বাধীন। আপনার শরীর এখন কেমন? শরীর কেমন জবাব দিতে পারলাম না, আবারও অচেতন হয়ে পড়লাম। এক সময় জ্ঞান ফিরল। হলুদ পাঞ্জাবি পরা যুবক তখনো পাশে বসা। আমি বললাম, কে? যুবক কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি স্বাধীন। হিমুর এই বইটি স্বাধীনের জন্যে। যে মমতা সে আমার জন্যে দেখিয়েছে সেই মমতা তার জীবনে বহুগুণে ফিরে আসুক- তার প্রতি এই আমার শুভকামনা।
২৯। ভূত ভূতং ভূতৌ
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের কি কখনো এমন হয় যে কোন একজন কে খুব ভালো লাগে, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে ভালোলাগার কথাটা বলতে পারো না? আমার প্রায়ই হয়। আমার এমন একজন ভালো লাগার মানুষ হচ্ছেন ছোট মির্জা আসাদুজ্জামান নূর। মুখ ফুটে তাকে এই কথা বলিনি। আজ বললাম। ছোটদের এই বইটি তার জন্য।
৩০। নীল মানুষ
জলি আবেদিন আড়ালে তাঁকে আমি ডাকি সিস্টার টুয়েন্টি টু ক্যারেট। কারণ তাঁর হৃদয় বাইশ ক্যারেট সোনায় বানানো- কোন খাদ নেই।
কবি ফরহাদ মজহার, প্রিয়তমেষু কবি-মানুষ যে রাজনীতি নিয়ে জটিল জটিল রচনা লিখে সবাইকে চমকে দিতে পারে- আমার ধারণা ছিলো না।
জাহিদ হাসান, প্রিয় মানুষ। মানুষ হিসেবে সে আমাকে মুগ্ধ করেছে, একদিন হয়তো অভিনয় দিয়েও মুগ্ধ করবে। (দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলাম, হা হা হা!)।
৩৩। হিমুর আছে জল
একজন মানুষকে চেনা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ছবির আউটডোর শুটিং-এ। নিষাদের প্রিয় দাড়িওয়ালা মামাকে। তারিক আনাম খাঁন।
বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে উৎসর্গ করে লিখেছেন, “আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন মানুষ এত ভাল অভিনয় কি ভাবে করেন”।
৩৫। এই আমি
গাজী শামছুর রহমান, যিনি নিজে চোখ বন্ধ করে থাকেন কিন্তু আশেপাশের সবাইকে বাধ্য করেন চোখ খোলা রাখতে
৩৬। উড়ালপঙ্খী
আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে সপ্তাহে একবার যাদের মুখ না দেখলে মনে হয় সপ্তাহটা ঠিকমতো পার হলো না। কিছু যেন বাদ পড়ে গেলো। শফিক-উল-করিম
”আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবেরলেখা ‘মরণ সঙ্গীত’- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়।‘প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়েআছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়।‘ ’নক্ষত্রের রাত’ নামের ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিংফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং একজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি গাইতে। সে রাজি হলো। উৎসর্গপত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে। মেহের আফরোজ শাওন”
৩৮। মধ্যাহ্ন
মেহের আফরোজ শাওন। পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?”
“কন্যা লীলাবতীকে। এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে। মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
৪০। আমাদের শাদা বাড়ি
আ. ম. ম. শহীদুল্লা – শ্রদ্ধাষ্পদেষু
৪১। দেখা না-দেখা
নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!
মানুষ পৃথিবীতে এসেছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে। শোনা যায় কিছু মহাসৌভাগ্যবান মানুষ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়েও আসেন। আমার কপাল মন্দ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দূরের কথা পঞ্চম ইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় কাজ করে না। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে আমি কোন কিছুর গন্ধ পাই না। ফুলের ঘ্রাণ, লেবুর ঘ্রাণ, ভেজা মাটির ঘ্রাণ… কোন কিছুই না।
এদেশের এবং বিদেশের অনেক ডাক্তার দেখালাম। সবাই বললেন, যে নার্ভ গন্ধের সিগন্যাল মস্তিষ্কে নিয়ে যায় সেই নার্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা আর ঠিক হবে না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গন্ধবিহীন জগৎ স্বীকার করে নিলাম। কী আশ্চর্য কথা, অল্পবয়স্ক এক ডাক্তার আমার জগতকে সৌরভময় করতে এগিয়ে এলেন। দীর্ঘ পনেরো বছর পর হঠাৎ লেবু ফুলের গন্ধ পেয়ে অভিভূত হয়ে বললাম, এ-কী! যিনি আমার জগৎ সৌরভময় করেছেন, তাঁর নিজস্ব ভুবনে শত বর্ণের শত গন্ধের, শত পুষ্প আজীবন ফুটে থাকুক- এই আমার তাঁর প্রতি শুভ কামনা। ডা. জাহিদ
৪৩। তেঁতুল বনে জোছনা
অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ
কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন।
৪৪। জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল
সাজ্জাদ শরীফ
ভাই, বঙ্গদেশীয় ‘ইনটেলেকচুয়েলদের’ ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। এদের সহ্য হয় না। আপনাকে কেন সহ্য হলো এবং সহ্য হতে হতে কেন পছন্দ হয়ে গেল- বুঝতে পারছি না। আমার পছন্দের ব্যাপারটি কাগজ পত্রে থাকুক এই ভেবেই উৎসর্গ লিপি।
৪৫। আজ চিত্রার বিয়ে
নোভা আহমেদ, আরসাদ মাহমুদ চৌধুরী
যুগলেষু। আমার ছোট্ট মা নোভা, হঠাৎ বড় হয়ে গেছে। কী আশ্চর্য সে এখন তরুণী বধূ। বিয়ের আসরে দেখি সে একসময় মুগ্ধ হয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে কি প্রগাঢ় মমতা। মাগো! তোমার চোখের এই মমতা চিরস্থায়ী হোক পরম করুণাময়ের কাছে এই আমার বিনীত প্রার্থনা।
৪৬। এবং হিমু
ব্রাত্য রাইসু, যে মাঝে মাঝে হিমুর মতো হাসে।
৪৭। মিসির আলি আনসলভড
মিসির আলির কিছু স্বভাব আমার মধ্যে আছে। অতি বুদ্ধিমান মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। চ্যানেল আই এর ইবনে হাসান খান তার ব্যতিক্রম। অতি বুদ্ধিমান হলেও তার সঙ্গ আমি অত্যন্ত পছন্দ করি।
ইবনে হাসান খান
বুদ্ধিশ্রেষ্ঠ
৪৮। তোমাকে
জরী, তোমাকে
৪৯। নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ
গোলটা-চক্ষু, নুহাশ আব্বুটিং কে
৫০। হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য
এক জীবনে অনেককে বই উৎসর্গ করে ফেলেছি। এদের মধ্যে পছন্দের মানুষ আছে আবার অপছন্দের মানুষও আছে। অপছন্দের মানুষদের কেন বই উৎসর্গ করেছিলাম এখন তা আর মনে করতে পারছি না। উৎসর্গ খেলাটা আপাতত বন্ধ।
কিছু লেখা আছে কাউকে উৎসর্গ করতে মন চায় না। এই লেখাটি সেরকম। কাজেই উৎসর্গ পত্রে কেউ নেই।
৫২। আজ হিমুর বিয়ে
উৎসর্গ করার মতো কাউকে পাচ্ছি না। সরি।
৫৩। হরতন ইশকাপন
এই বইটির কোন উৎসর্গ পত্র নেই। উৎসর্গ পাতায় কারোর নাম লিখতে ইচ্ছা করছে না। যতো বয়স বাড়ছে আমিও মনে হয় মিসির আলির মতো নিজেকে গুটিয়ে আনছি।
৫৪। আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
বাবা ও মা’কে
৫৫। কহেন কবি কালিদাস
এক সময় তার পছন্দের চরিত্র ছিলো হিমু। সে হিমুর মতো কথা বলতো, হিমুর মতো ভাবতো। তার বোনরা তার কান্ড দেখে তাকে একটা হলুদ পাঞ্জাবিও বানিয়ে দিলো। সে গম্ভীর মুখে হলুদ পাঞ্জাবি পরে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো। কিছুদিন হলো সে জানাচ্ছে হিমু এখন আর তার প্রিয় চরিত্র না। সে এখন মিসির আলির ভক্ত। মিসির আলির এই বইটি তার জন্যে
নুহাশ হুমায়ূন দ্য গ্রেট
‘মিসির আলি অমনিবাস’আমার অতি প্রিয় গ্রন্থের একটি। প্রিয় গ্রন্থের সঙ্গে প্রিয়জনের নাম যুক্ত থাকাই বাঞ্চনীয়। মিসির আলির লজিক এই কথাই বলে। কাজেই বইটি গুলতেকিনের জন্য।
৫৭। হিমু রিমান্ডে
জগতের সর্বকনিষ্ঠ হিমু নিষাদ হুমায়ূন-কে। হাঁটি হাঁটি পা পা (হিমুর মতো) যেখানে ইচ্ছা সেখানে যা।
৫৮। বাদশাহ নামদার
নিনিত হুমায়ূনআমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে। সে যেন আমাকে মনে রাখে এইজন্যে নানান কর্মকান্ড করছি। আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি না। এখন সুযোগ পেলেই নিনিতকে কোলে নিয়ে ছবি তুলি।এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।
বোবায় ধরা নামের একটি জটিল ব্যাধি আমার আছে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় বিকট দর্শন জন্তুর মতো কয়েকটি অতিপ্রাকৃত প্রাণী আমার বুকে বসেছে। গলা চেপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। আতঙ্কে আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করতে থাকি। তখন একটা কোমল স্পর্শ আমার কপালে পৌঁছে। গভীর মমতায় একজন বলে, ‘এই তো আমি আছি’। আমার ঘুম ভাঙে, আমি স্বাভাবিক হই। মমতাময়ী শাওনকে।
৬০। শুভ্র সমগ্র
জগতের কনিষ্ঠতম শুভ্র, আমার ছোট্ট বাবু ‘নিষাদ’কে। জোছনার ফুল অনেক চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। ছোট্ট শুভ্রকে দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি সে যেন ধরার চেষ্টা করে।
৬১। পুফি
নিষাদ তার নানাজানকে ডাকে মহারাজ। মহারাজ বিড়াল দু’চক্ষে দেখতে পারেন না। তার ফ্ল্যাটে পুফি নামে একটা বিড়াল ছিলো তাকে তিনি অঞ্চল ছাড়া করেছেন। লাভ হয়নি, অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে বিড়াল তাঁর ঘরে ঢুকে। কেমন করে জানি তাকিয়ে থাকে। বিড়াল বিদ্বেষী মহারাজা ইঞ্জিনিয়ার মোহম্মদ আলী শ্রদ্ধাভাজনেষু
৬২। তন্দ্রাবিলাস
সেলিম চৌধুরী এবং তুহিন
মাঝে মাঝে চিন্তা করি- আমার এক জীবনের সঞ্চয় কি? কিছু প্রিয় মুখ, কিছু সুখ স্মৃতি… প্রিয়মুখদের ভেতর তোমরা আছো। এই ব্যাপারটা তোমাদের কাছে কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি না…
৬৩। সেদিন চৈত্রমাস
”আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অতি বুদ্ধিমান কেউ কখনো ভাল মানুষ হয় না। মারুফ তার ব্যতিক্রম। আচ্ছা তার সমস্যাটা কি? ̶ কবি মারুফুল ইসলাম ভালমানুষেষু” ।
৬৪। লীলাবতী
শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশকবি, আমি কখনো গদ্যকার হতে চাই নি।আমি আপনার মতো একজন হতে চেয়েছি।হায়, এত প্রতিভা আমাকে দেয়া হয় নি।
৬৫। মানবী
মেহের আফরোজ শাওন
সুকল্যাণ হাসে প্রসন্ন হাসি আজ দিতে হবে দাসে
৬৬। জল জোছনা
সমরেশ মজুমদারএকজন বড় মাপের মানুষ।
৬৭। সে ও নর্তকী
বিমুখ প্রান্তরে সেই সবুজের সমারোহহাসান হাফিজুর রহমানস্মৃতির উদ্দেশ্যে
৬৮। পুতুল
নীলু, কল্যাণীয়াসু ‘কতো না দিন রাতি তুমি ছিলে আমার খেলার সাথী’
৬৯। যখন নামিবে আঁধার
খোকন নামের সঙ্গে কীভাবে যেন আমি যুক্ত। চারজন খোকনের সঙ্গে আমার গাঢ় পরিচয় আছে। খোকন সিঙ্গাপুর খোকন নিউ ইয়র্ক খোকন লাস ভেগাস খোকন ঢাকা চার খোকনের এক বই
৭০। মাতাল হাওয়া
কোন মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন। আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তাঁর রক্তমাখা শার্ট ছিলো ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি
৭১। ছেলেটা
“আনোভা, এই মেয়ে, আমি তোমার নামের বানান জানিনা। তুমি কেমন, তোমার হাব ভাব কেমন এই তথ্য আমার জানা নেই। তুমি কোনদিন বাংলা শিখবে কিনা, আর শিখলেও আমার বই তোমাকে পড়তে দেয়া হবে কি না তাও জানি না। তাতে কি? এই বইটা তোমার জন্য”।
৭২। জলপদ্ম
সাধারণ হয়েও অসাধারণ আমার অতি প্রিয় একজন ময়মনসিংহের সালেহ ভাই করকমলে।
কাকলী প্রকাশনীর নাসির আহমেদ এবং সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদ এরা দু’জনেই জানে না এদের আমি কি পরিমাণ পছন্দ করি। একদিন হুট করে মরে যাবো, আমার ভালোবাসার কথা এরা জানবে না। তা তো হয় না। কাজেই এই উৎসর্গপত্র
পক্ষী বন্ধু সাদাত সেলিম তিনি পাখিদের ভালোবাসেন পাখিরা কি তাঁকে ভালোবাসে?
অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস
এ সময়কার একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ
৭৬। প্রিয়তমেষু
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
করকমলে
– ড: আলী নওয়াব শ্রদ্ধাপদেষু
৭৮। রোদন ভরা এ বসন্ত
হিমু নামের কেউ যদি থাকতো তাহলে কোন এক জোছনার রাতে তাকে বলতাম- এই বইটি কেন আপনাকে উৎসর্গ করা হল বলুনতো? দেখি আপনার কেমন বুদ্ধি!
৭৯। রূপা
তিনি দূর দ্বিপবাসিনী তাঁর পছন্দের জগত, স্টেইনবেকের রহস্যময় জগৎ আমার অল্প কিছু কাছের মানুষদের একজন সালেহ চৌধরী
৮০। হিমু
আয়েশা মোমেন, আপা, আপনি ভালোবাসার যে কঠিন ঋণে আমাকে জড়িয়ে রেখেছেন, সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। ঋণী হয়ে থাকতে ভালো লাগে না, কিন্তু কী আর করা!
মধ্যরাত্রে যাদের সাথে হিমুর দেখা হয়, বইটি তাদের জন্যে।
৮২। অয়োময়
আমার স্তন্যদাত্রী নানিজানকে
৮৩। একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি
Poor FLC-কে। হতদরিদ্র শব্দটির একটি সুন্দর বাংলা আছে, ‘নয়দুয়ারি’।
৮৪। অপেক্ষা
গানের পাখি ফিরোজা বেগম
করকমলে
৮৫। পিপলী বেগম
যেসব বাবা-মা’ তাঁদের ছেলেমেয়েদের বই প্তহেকে গল্প পড়ে শোনাতে ভালোবাসেন, পিপলী বেগম তাঁদের জন্য
৮৬। জলপদ্ম
সাধারণ হয়েও অসাধারণ আমার অতি প্রিয় একজন ময়মনসিংহের সালেহ ভাই।
করকমলে।
৮৭। হোটেল গ্রেভার ইন
আবারো গুলতেকিনকে
৮৮। কুহুরানী
এক জীবনে অনেক বই লিখেছি। প্রিয় অপ্রিয় অনেককেই বই উৎসর্গ করা হয়েছে। প্রায়ই ভাবি প্রিয় কেউ কি বাদ পড়ে গেল? অতি কাছের কোন বস্তুকে ক্যামেরা ফোকাস করতে পারে না। মানুষ ক্যামেরার মতোই। অতি কাছের জন ফোকাসের বাইরে থাকে। ও আচ্ছা পুত্রসম মাজহার বাদ পড়েছে।
মাজহারুল ইসলাম
সুকনিষ্ঠেষু
৮৯। নবনী
আসিফ নজরুল
৯০। রজনী
হুমায়ুন ফরিদী
৯১। অনীশ
শাহাদৎ চৌধুরী
৯২। ময়ূরাক্ষী
অন্ধ-ভক্ত (!) সোমাকে, যার সঙ্গে বৎসরে একবার মাত্র আমার দেখা হয়।
৯৩। কৃষ্ণপক্ষ
অধ্যাপক মোঃ আবদুল বায়েছ ভূঞা
প্রিয়জনেষু
আমার কিছু পাঠক আছেন যারা হিমু এবং মিসির আলি দুজনকেই পছন্দ করেন না। হিমু মিসির আলি যুগলবন্দি বইটি তাদের জন্যে।
৯৫। আশাবরী
জাহানারা ইমাম
৯৬। ইরিনা
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
৯৭। বৃহন্নলা
ডক্টর মুনতাসীর মামুন,
যিনি মনে করেন আমার মিসির আলি বিষয়ক রচনাগুলির টিকে থাকার ক্ষীন সম্ভাবনা আছে। অন্য রচনাগুলির তাও নেই।
ড. আবদুল করিম
কিছু লেখা আছে কাউকে উৎসর্গ করতে মন চায় না। এই লেখাটি সেরকম। উৎসর্গ পত্রে কেউ নেই।
১০০। দেবী
বিপাশা হায়াত,
অলীক যুগলেষু, এই বইয়ের সংখ্যা কম নয়। বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে সবাইকে ভালোবেসেছেন লেখক হুমায়ূন। সারাজীবন। তার কিছু বইয়ে অবশ্য উৎসর্গ করেননি হুমায়ূন আহমেদ। ‘কুহক’ বইয়ে ছিল না কোন উৎসর্গের পাতাই! ভালোবাসাগুলো একটা সময় অভিমানে পরিণত হয়েছিল লেখকের। তবুও, অন্য কোন স্থান থেকে এখনো কাছের মানুষগুলোর দিকে ভালোবাসাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ, এমনটাই শুধু কল্পনা করা যায়!
হুমায়ুন আহমেদের সকল বই দেখতে
2 thoughts on “হুমায়ূন আহমেদ এর শ্রেষ্ঠ ১০০ বইয়ের উৎসর্গ পত্র”
Pingback: বিড়ালাক্ষী ও নয়নতারা - রকমারি ব্লগ
Pingback: স্মৃতিচারণ ও পেশাগত অভিজ্ঞতায় ভরা জীবনের গল্প নিয়ে সোলায়মান সুখন যা বললেন ।। Solaiman Shukhon - রকমারি ব