বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ বৃটিশ উপনিবেশায়নের বিরুদ্ধে তার যাত্রা ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা। মুসলিম লীগের আন্দোলন মুলত ছিলো এ কারণেই। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে গঠন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারেন তিনি যেই পাকিস্তান চেয়েছিলেন, সেটি হয়নি। তাঁর রাজনৈতিক ভাবনার জায়গা থেকে অন্যরকম এক পাকিস্তান গঠন হয়েছে। এবং তার রাজনৈতিক আদর্শের মত এবং সাথে সাথে অসাম্প্রদায়িক পাকিস্তান যে গঠন করা সম্ভব হয়নি, সেটি তিনি একদম পাকিস্তান শুরুর সময় থেকেই টের পাচ্ছিলেন। যেহেতু পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে গঠন হয়ে গেছে তাই বঙ্গবন্ধু নতুন করে ভাবলেন। তাঁর রাজনৈতিক দুরদর্শিতার জায়গা থেকে নতুন এক মাত্রা যোগ করলেন তাঁর ভাবনায়। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগে রূপান্তর হবার মধ্য দিয়ে আমরা এই ভাবনার খানিকটা প্রতিফলন দেখতে পাই। যেটি প্রায় একটি ঘোর সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেরিয়ে এসে গণসংগঠনের দিকে যাত্রা করে।
এটির উল্লেখ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর লেখা আত্মজীবনীমুলক বইতে। ‘১৯৪৭ সালে যে মুসলিম লীগকে লোকে পাগলের মত সমর্থন করেছিল, সেই মুসলিম লীগ প্রার্থীর পরাজয়বরণ করতে হলো কী জন্য? কোটারি, কুশাসন, জুলুম, অত্যাচার এবং অর্থনৈতিক কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে। ইংরেজ আমলের সেই বাঁধাধরা নিয়মে দেশ শাসন চলল। স্বাধীন দেশ, জনগণ নতুন কিছু আশা করেছিল, ইংরেজ চলে গেলে তাদের অনেক উন্নতি হবে এবং শোষণ থাকবে না। আজ দেখছে ঠিক রাত উল্টা। জনগণের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছিল। এদিকে ভ্রুক্ষেও নাই আমাদের শাষকগোষ্ঠীর’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃঃ১১৯)

বঙ্গবন্ধু ক্রমশই বাঙালিদের স্বতন্ত্র দাবি নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন। তিনি ধারণা করতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালীরা থাকলেও আদতে এমনও একদিন আসতে পারে যে, পাকিস্তানী শাষকরাই তাদেরকে আলাদা হিসেবে দেখা শুরু করবে এবং শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দৃষ্টিতে বেশ দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিলো। তাই তিনি নিজের অঞ্চলের দিকে মন দিলেন। তখনও কেউ জানতো না, একদিন এই ভূমিই হবে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র।
তবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা লোকদের দিকে শুধু না তাকিয়ে পেছনে ফিরলে দেখি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণেই বঙ্গবন্ধুর শত্র-মিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ গঠন হবার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর শত্রু এবং মিত্র পাল্টে গেলো। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে এজেন্ডাগত পরিবর্তন না হলেও নতুন শত্রু এবং মিত্রের কথা ভেবে রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হয়েছিলো।
সেসময়কার দুনিয়া মুলত সোভিয়েত আর আমেরিকার ক্যাপিটাল ব্লকের মাধ্যমে প্রায় বিভক্ত ছিলো। স্নায়ুযুদ্ধের মত এই দুটো ব্লক পুরো পৃথিবীকে আদর্শিক ভাবে বিভক্ত করে রাখলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বেশ জোড়ালো ভাবে উপমহাদেশে সেসময় বিরাজ করছিলো। খুব সহজভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্লক বুঝতে পারছিলো অখন্ড পাকিস্তানের মধ্যে যেসব জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তা পুঁজিবাদের সঙ্গে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এক কথায়, ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কর্মকান্ড যে ধীরে ধীরে অখন্ড পাকিস্তানের শক্তিকে ক্ষয় করছে এটি এমনিতেও ধারণা করছিলো শাষকগোষ্ঠী। তাই দফায় দফায় বঙ্গবন্ধুকে হাজতবাস করিয়ে এই যাত্রাকে থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গনমানুষের সম্পর্ক এই পরিকল্পনাকে ব্যহত করছিলো। কিন্তু দূর থেকে সেসময়কার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুঁজিবাদী ভিত এই ব্যাপারটি বেশ ভালো ভাবে অনুভব করতে পারছিলো। এবং তার প্রতিফলন পরবর্তীতেও আমরা দেখতে পাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপারটিকে খানিকটা স্পষ্ট করে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে ভারত সাহায্য করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারতকে দেয়া সব ধরণের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। তবে ভারতের উপর এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিলো, অনেকে ভেবেছিলেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আমেরিকা যে ‘নিরপেক্ষ ভূমিকা’ পালন করেছিলো, এবারও হয়তো দেশটি তেমন ভূমিকাই নেবে। এছাড়া, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে ভারতের ব্যাপারে আমেরিকার সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ হিসেব বর্ণনা করেছিলো।
বলাই বাহুল্য, পাকিস্তানে থেকেও যারা দেশকে মুলত একটি সাম্প্রদায়িক এবং পুঁজিবাদী মনে করতো তাদের আতে ঘাঁ লাগা শুরু হয়েছিলো। এখানে মুল বিষয় ছিলো, সাম্প্রদায়িকতা এবং পুঁজিবাদ। কারণ তৎকালীন পাকিস্তানী শাষকরা বোঝানোর চেষ্টা করছিলো এটি মুলত মুসলিমদের দেশ। মুশকিল হলো, পুঁজিবাদের ভয়ংকর দৃষ্টিতে তারা মুসলিম-অমুসলিম ভুলে যেত। বোঝাই যাই, সাম্প্রদায়িক এবং পুঁজিবাদী যেসব মানুষেরা তখন পাকিস্তানে ছিলেন, তারা বেশ সক্রিয় ও শক্তিশালী ছিলেন। তাই পুরো স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আন্দোলন করাটা বঙ্গবন্ধুর জন্য সহজ ছিলো না।
সে হিসেবে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ স্বাধীন হওয়া ছিল তাদের জন্য বিরাট একটি ব্যর্থতা। সঙ্গত কারণেই তাদের ক্ষোভ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের স্থপতির বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু এখানে একটি ঘটনা লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপর দেশে সরকার গঠন করা ছিলো বেশ জটিল একটি কাজ। তাছাড়া পুরোটা সময় বন্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছরের ৮ জানুয়ারি তাকে মুক্তি দেয়া হলেও লন্ডন হয়ে তিনি ঢাকায় ফেরেন ১০ তারিখ। তার দু’দিন পর ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর তিনি যখন ফেরেন, সহজাতভাবেই তিনি আশেপাশের মানুষ থেকে বিভিন্ন ব্যাপার জানছিলেন। শহরের অবস্থা নিজ চোখে অবলোকন করলেও রাজনৈতিক টানাপোড়েনগুলো একেকজন থেকে শোনা ছাড়া তার উপায় ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধ থাকাকালে যেহেতু অস্থায়ী সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, তাই সেই খারাপ শক্তির ছায়াতলে থাকা মানুষরা তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু একটি দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করেন। যদিও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হাজারো সমস্যার মধ্যে এটি চাপা পরে যায়।
এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই ভারত সফরে যান। ভারত সরকার স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রন জানিয়েছিলো। এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো। কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোটা সময়জুড়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তারপর পর ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে যান। মুলত এই সফরটি ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক এবং পুঁজিবাদী ব্লককে জাগিয়ে তোলে।
এছাড়াও প্রশাসনিক আরেকটি সমস্যা তৈরি হয়েছিলো তখন। দেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের সময়কার অনেক মানুষই প্রশাসনের দায়িত্বে থেকে গিয়েছিলেন যারা মুলত স্বাধীন রাষ্ট্রের কাছে অঙ্গিকারবদ্ধ ছিলেন না। এতে করে যুদ্ধ পরবর্তী দেশের হাজারো সমস্যাগুলোকে সমাধান করার ব্যাপারেও প্রশাষণের বিভিন্ন জায়গায় আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা গিয়েছিলো। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণেও এটি উঠে আসে। বেশ ক্ষোভের সঙ্গে তিনি তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মায়না দেয় ওই গরিব কৃষক, আপনার মায়না দেয় ওই জমির শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চলি ওই টাকায়….ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক। …সরকারি কর্মচারীদের বলবো। মনে রেখো, এ স্বাধীন দেশ, এ ব্রিটিশ কলোনি নয়, পাকিস্তানি কলোনি নয়। যে লোকরে দ্যাখবা তার চেহারা দেখ তোমার বাবার মত, তোমার ভাইয়ের মত, ওর পরিশ্রমের পয়সা, ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ ওরা নিজে কামাই কইরা খায়…’।
সহজভাবে বললে, তিনি স্বাধীন হবার পর যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটিকেও দৃশ্যমান দেখতে পাচ্ছিলেন না। এবং তিনি শুরু থেকেই চাচ্ছিলেন সোভিয়েত ব্লক কিংবা পুঁজিবাদী ব্লক, উভয় শক্তির সমন্বয় করে দেশ গঠন করতে। কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে বিভিন্ন পরিকল্পনায় থাকা মানুষের কারণে এটা অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন খেয়াল করলেই দেখা যায়, সময়ের ও পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় এজেন্ডাভিত্তিক পরিবর্তন এনেছেন। এখানেও তিনি বাধ্য হয়ে সে কাজটি করলেন। তিনি একদলীয় একটি শাষণের দিকে ঝুকলেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তিনি প্রায়ই বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। অবস্থার উন্নতি হলে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে তিনি এই এজেন্ডায় এগোবেন না। কিন্তু বিরোধী শক্তির কাছে এটি একটি বেশ ভালো সুযোগ ছিলো বঙ্গবন্ধুকে জনগনের সামনে শত্রু করে তুলবার। সাথে সাথে এটিই মোক্ষম সময়, যেসময় বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দিতে পারলে সবার সামনে ‘বাকশাল’ পদ্ধতিকে প্রোপাগান্ডা হিসেবে চালিয়ে হত্যার ব্যাপারটির বৈধতা নেয়া যাবে।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদে বিশ্বাসী শক্তি এখানে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠলো। কারণ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা খানিকটা সমাজতান্ত্রিক ধারার। সে কারণে তারা ধারণা করলো, বঙ্গবন্ধুর এই পরিকল্পনা সোভিয়েতকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। বলা যায়, বেশ কিছু বিরোধী শক্তি যারা এতদিন ধরে স্বাধীন রাষ্ট্র হবার হতাশায় ছিল তারা আলোর মুখ দেখলো।
পাকিস্তানকে অখন্ড না রেখে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী শক্তির সঙ্গে আতাত না করা, সোভিয়েত কিংবা সমাজতান্ত্রিক ধারার মত করে রাষ্ট্র পরিচালনা সহ এরকম বিষয়গুলো সামনে আসার পর কোনভাবেই বঙ্গবন্ধুকে সহ্য করার অবস্থা তাদের রইলো না। বহু বছর আগেই তারা যে কাজটি করতে চেয়েছিলো, কালবিলম্ব না করে এবার তারা সেদিকে এগিয়ে গেলো। উইকিলিকস ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, শুধু ১৫ আগস্টের আগে প্রায় তিনবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত থাকা খুনীদের কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপারও এখানে জড়িত ছিলো কিন্তু তার চেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল যা আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে গেছে।
এটি স্পষ্ট যে, ‘কিছু বিপথগামী ও উচ্চভিলাষী সেনা ১৫ আগস্ট সকালে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে’ ব্যাপারটা এত সাদামাটা ছিলো না। এর পেছনে ছিলো ইতিহাসের ঘটনার বিভিন্ন অলিগলির ভেতরে। আসলে বেইমানদের কেউই বিশ্বাস করে না। এমনকি যাদের প্ররোচনায় এরা ঘটনা ঘটায়, যাদের সুতোর টানে এরা নাচে তারাও শেষ অবধি বিশ্বাস করে না। ইতিহাস সেই শিক্ষাই দেয়, কিন্তু মানুষ কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়?
চোখের আড়ালে থাকা বিশাল এক অধ্যায়।
(শেখ হাসিনা, ১২ আগস্ট ১৯৮৯)