বনলতা সেন, প্রবাদপ্রতীম এক কাল্পনিক নারী চরিত্র। জীবনানন্দ’কে জানলে বনলতা সেন’কেও চিনতে বাদ যায় না আমাদের। একজন স্রষ্টা, আরেকজন সৃষ্টি। যাঁরা কবিতা ভালোবাসেন, পড়েন, তাঁরা জীবনানন্দ’তে মুগ্ধ – এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। কবিতা ও জীবনানন্দ দাশ সমার্থক হয়ে উঠেছে আমাদের কবিতাভুবনে। তারঁ জীবন, লেখালেখি, কবিতার ধরণ সবই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণময়, স্বতন্ত্র। মৃত্যুর পর থেকেই সে-সব গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আজও তা চলছে।
কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৮৯৯ সালে ১৭ ই ফ্রেব্রুয়ারি বরিশাল জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মতান্তরে ১৮৯৮ সালে (লাবণ্য দাশ বলেছেন। সূত্র: বিষ্ণু দে – সম্পাদিত ‘একালের কবিতা’ সংকলনের ভূমিকা)। পিতা সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩-১৯৪২) ও মাতা কুুসুমকুমারী দাশ (১৮৭৫ -১৯৪৮)। পারিবারিক উপাধি ছিল ‘দাশগুপ্ত’। প্রথমদিকে নামের পদবীতে ‘দাশগুপ্ত’ লিখতেন। পরে ‘গুপ্ত’ বাদ দিয়ে জীবনানন্দ দাশ লেখা শুরু করেন। কবির পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বরিশালের কালেক্টরী অফিসে চাকুরী নিয়ে বরিশাল শহরে আসেন এবং সেখানেই বাড়ি করেন। ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন তিনি। পিতা সত্যানন্দ দাশ ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রবন্ধকার ও একটি পত্রিকার (ব্রহ্মবাদী) প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন। মাতা কুসুমকুমারী দাশ কবিতা লিখতেন। বরিশালের মেয়ে তিনি। কুসুমকুমারীর পিতা হাসির গান ও কবিতা লিখতেন। বলা যায়, লেখালেখির জগৎ জীবনানন্দ পিতৃ-মাতৃ উভয় কুল থেকেই পেয়েছিলেন। কুসুমকুমারী দাশের লেখা ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি অতি পরিচিত। বিশেষ করে তার বিখ্যাত দুটি চরণ এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
‘‘মানুষ হইতে হইবে”– এই তার পণ।
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ ?
*আদর্শ ছেলে, কুসুমকুমারী দাশ
বলতেই হয়, সেই ‘আদর্শ ছেলে’ কুসুমকুমারী দাশ নিজ-গর্ভেই ধারণ করেছিলেন। পিতা-মাতার প্রভাব জীবনানন্দ দাশ এর জীবনে প্রবলভাবে কার্যকর হয়েছিল। আরেকজন হলেন ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আচার্য জগদীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় যার প্রভাবও পড়েছিল জীবনানন্দ’র জীবনে। একটি শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও আদর্শিক পারিবারিক পরিমন্ডলে জীবনানন্দ বড় হয়ে উঠেছিলেন। ছোটবেলায় পরিবার থেকে নানারকম কাহিনী, ছড়া শুনতেন। অনেক গাছ ও পাখির নাম সেভাবেই শেখা। জীবনানন্দ দাশ ছিলেন লাজুক, গম্ভীর, মিতভাষী। লাজুক হলেও খেলাধুলা, ভ্রমণ ও সাঁতারে তাঁর অভ্যেস ছিল। তিনভাই বোনের মধ্যে জীবনানন্দ বড়। ভাই অশোকানন্দ ও বোন সুচরিতা দাশ।

জীবনানন্দ বরিশালের ব্রজমোহন স্কুল, ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। পরে ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম.এ. পাশ করেন। আইন নিয়ে পড়ছিলেন, কিন্তু পরীক্ষা দেননি শেষ-পর্যন্ত। জীবনানন্দের বিয়ে হয়েছিল ঢাকা শহরে ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে, ১৯৩০ সালে। পাত্রী লাবনী গুপ্ত, খুলনার মেয়ে। এক বহুমান্য ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম। ১৯৪৬ সালে জীবনানন্দ স্থায়ীভাবে কলকাতা চলে যান। লাবন্যদেবী কলকাতার এক বাীলকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। তাঁদের সন্তান, কন্যা মঞ্জুশ্রী ও পুত্র সমরানন্দ দাশ।
প্রচারবিমুখ জীবনানন্দ সভাসমিতি এড়িয়ে চলতেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশের পরও কাউকে তেমন কিছু জানাননি। তরুণী স্ত্রীর কাছেও কোনোদিন গৌরব করে বলেননি যে, তিনি কবিতা-টবিতা লেখেন। বরং লেখার সময় লাবন্য এলে লুকিয়ে রাখতেন। তবে আত্মমগ্ন এই কবির নির্জন পরিচয়ের বাইরেও আরেকটি পরিচয় আছে। বেশ সুরসিক মানুষ ছিলেন। অন্তরঙ্গ হলে গল্প রসিকতায়, ভরিয়ে তুলতেন। অনেক মজার মজার কথায় হাসির ঢেউ বয়ে যেত। তেমন কোনো চাহিদা ছিল না তাঁর । অল্পেই তাঁকে তুষ্ট রাখা যেত। সব সময় বই পড়তেন। বই-ই ছিল তাঁর আশ্রয়। সেটি তাঁর কবিতা পড়লেই বোঝা যায়। কত কিছুর যে উল্লেখ আছে সেখানে! তাঁর কবিতায় মানুষ, পৌরাণিক বিষয়-চরিত্র, ইতিহাস-ভূগোলের সমাগম ঘটেছে অফুরাণভাবে।

অসুখী কর্মজীবন
জীবনানন্দ দাশ খুব একটা সাংসারিক মানুষ ছিলেন না। কর্মজীবনে সফলতার চেয়ে টানাপেড়েনের মধ্যেই জীবন কেটেছে তাঁর। এ নিয়ে মাতা কুসুমকুমারী দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। বড় ছেলে। প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। বৈষয়িক ব্যাপারে নির্মোহ কিন্তু নৈতিকতায় আস্থা ছিল। প্রথম কর্মজীবন শুরু হয় ১৯২২ সালে কলকাতার সিটি কলেজে ইংরেজী ভাষা-সাহিত্যের লেকচারার হিসেবে। ১৯২৮ সালে ‘ক্যাম্পে’ নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হলে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। বস্তুত: তাবৎ জীবজগৎকে নিয়ে প্রকৃতির এক নিষ্ঠুর খেলার ঐতিহাসিক বিবরণ বিধৃত ছিল কবিতাটিতে। সমসাময়িক পাঠকের পক্ষে ‘ক্যাম্পে’র ভাববস্তু গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। অনেকের কাছে তা দুর্বোধ্য হওয়ায় কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ, বাক্য এবং উপমা নির্বিবাদে অশ্লীল বলে বিবেচিত হয়েছিল। কলেজের অধ্যক্ষ জীবনানন্দকে চরম ভর্ৎসনা করেছিলেন। শেষ অব্দি কলেজ কৃর্র্তৃপক্ষ তাঁকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে ছাড়েন। এভাবেই তাঁর কর্মজীবনের অস্থির সূচনা হয়।
জীবনানন্দ একসময় ব্রজমোহন কলেজেও অধ্যাপনা করেছেন, ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত । মাস তিনেক ছিলেন বাগেরহাট কলেজে। ১৯২২-৫৪ – এই বত্রিশ বছরের অধ্যাপনাজীবনে মাঝে-মাঝেই তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। তবে কৃপালক্ষী তাঁকে ছেড়ে গেলেও বিদ্যাদেবী তাঁকে বঞ্চিত করেননি, আগলে রেখেছিলেন আমৃত্যু।
১৯৫৩ সালে হাওড়া গার্লস কলেজে জীবনানন্দ যখন যোগদান করেন, তিনি যেন জীবন পেলেন। বস্তুত এই কলেজেই তিনি তাঁর কর্মজীবনের শ্রেষ্ঠ শান্তি-প্রীতি ও স্নিগ্ধতা পেয়েছিলেন, যা তিনি কর্মজীবনে আর কোথাও পাননি। সেখানে সবাই তাঁকে সহৃদ্যতায় ও শ্রদ্ধায় গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তা স্থায়ী হলো না। মৃত্যু এসে সব ছিন্নভিন্ন করে দিল। মাত্র এক বছর কয়েক মাস পরই কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটানায় পড়েন কবি। ১৯৫৪ সালে ১৪ অক্টোবর সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ২২ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন। এক বড় ট্রাজেডী ঘটে গেল বাংলাসাহিত্যের কাব্যভুবনে।

লেখালেখির সূচনাঃ প্রকৃতির কবি নাকি রবীন্দ্রদ্রোহী
১৯১৯ সালে জীবননন্দের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়, ‘বর্ষা-আবাহন’ নামে। তাঁর সর্বশেষ কবিতা সম্ভবত ‘দুদিকে ছড়িয়ে আছে’।
জীবনানন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম মন্তব্য করেন ১৯১৫ সালে। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোলো। তখন জীবনানন্দ কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নিরাশ করেননি। রত্ন চিনতে কবিগুরু ভুল করেননি। উত্তরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: ‘তোমার কবিত্ব শক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নাই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহসিত করে। বড়ো জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয় বরঞ্চ উল্টো।’
মন্তব্যটি রূঢ়, সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা মন্তব্য তো পেয়েছিলেন তিনি অত বড় কবির কাছে থেকে। তদুপরি কবিগুরু তখন নোবেল লরিয়েট। একজন তরুণ কবির পক্ষে এ এক বিরাট আশির্বাদ। এ আশির্বাদ তাঁর জন্য পরেও ঝরেছে।
১৯৩৫ সালে বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন এক চিঠিতে বুদ্ধদেবকে লেখেন: ‘জীবনানন্দ দাশের চিত্ররূপময় কবিতাটি আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’ বস্তুত জীবনানন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের এই একটিমাত্র লক্ষ্যভেদী শব্দ ‘চিত্ররূপময়’ অভিধাটি সমগ্র জীবনানন্দ সম্পর্কেই সত্য ও প্রযোজ্য হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের অনুমোদন লাভ করেছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। এবার তিনি আত্মবিশ্বাসী।
১৯৩৬ সালে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পান্ডুলিপি’র জন্য প্রমথ চৌধুরীর কাছে সমালোচনা প্রার্থণা করেছিলেন। তবে বিফল হন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ফিরিয়ে দেননি। পত্রে তাঁকে জানিয়েছিলেন, ‘তোমার কবিতাগুলি পড়ে খুশি হয়েছি। তোমার লেখায় রস আছে, স্বকীয়তা আছে এবং তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: ‘তোমার কবিত্ব শক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নাই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহসিত করে। বড়ো জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয় বরঞ্চ উল্টো।’
জীবনানন্দ দাশকে বুদ্ধদেব বসুই চিনতে পেরেছিলেন অন্য সকলের আগে এবং শুরু থেকেই। তিনি বলেছিলেন, জীবনানন্দ দাশ আমাদের নির্জনতম স্বভাবের কবি, সবচেয়ে স্বতন্ত্র। বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকাতেই জীবনানন্দের কবিতা বেশি প্রকাশিত হয়েছিল এবং বলতে গেলে সেরা কবিতাগুলো। জীবনানন্দের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু ও সঞ্জয় ভট্টাচার্যই ছিলেন তাঁর কবিতার অনুরাগী, সমর্থক ও সম্প্রচারক। বুদ্ধদেব বসু এক সম্পাদকয়ীতে লিখেছিলেন, জীবনানন্দবাবু বাঙলা কাব্যসাহিত্যে একটি অজ্ঞাতপূর্ব ধারা আবিষ্কার করেছেন বলে আমার মনে হয়। তাঁর রচনার প্রতি অনেকে বোধ হয় বিমুখ। তার কারণ, জীবনানন্দবাবুর কাব্যরসের যথার্থ উপলব্ধি একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাঁর কবিতা একটু ধীরে সুস্থে পড়তে হয়, আস্তে আস্তে বুঝতে হয়।
হারিয়ে যাওয়া কয়েকটি খাতা! আর তাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সময় নষ্ট না করে বিশেষ দলও তৈরি করে ফেললো কলকাতা পুলিশ। তার পর তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু হয়েছিল কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায়। শেষ পর্যন্ত এক পুরনো বইয়ের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল কয়েকটি খাতা। কিন্তু তা-ও সব ক’টা নয়! বইয়ের দোকানদারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল বইপাড়ারই এক মুদিখানার দোকানে। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, হারানো খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে তৈরি ঠোঙায় সর্ষে বিক্রি করছেন ওই মুদিখানার দোকানদার! তিনি জানিয়েছিলেন, সাত কিলো ওজনের ওই রদ্দি কাগজপত্র তিনি কিনেছিলেন সাড়ে ১২ টাকায়! শেষ পর্যন্ত যেটুকু অক্ষত ছিল, উদ্ধার করা হয়েছিল তা। যিনি খাতা হারানোর অভিযোগ করেছিলেন, তিনি মঞ্জুশ্রী দাশ।’ জীবনানন্দ দাশের কন্যা।
কবির জীবদ্দশায় মাত্র সাতটি কবিতাগ্রন্থ বেরিয়েছিল। তাতে কবিতা ছিল ১৬৩টি। ঝরা পালক, ধূসর পান্ডুলিপি, বনলতা সেন (দুটি আলাদা সংস্করণ), মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির ও জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। ‘মাত্র’ বলা এ জন্য যে তাঁর অগ্রন্থিত কবিতার সংখ্যা বিপুল। মৃত্যুর এত বছর পরও তাঁর কবিতা বেরিয়ে আসছে। কখনো পান্ডুলিপি আকারে, কখনো পুরোনো পত্রিকা ঘেটে। তাঁর বহু কবিতা সেই সময়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্রে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। দুর্লভ, দূস্প্রাপ্য সেসব পত্রিকা থেকে রচনাগুলি সংগ্রহ ও সংকলিত করা এক দুরুহ কাজ বটে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর কবিতা প্রায় ষাটাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে অনুক্ত, আনন্দবাজার, উত্তরসূরী, উষা, একক, কবিতা, কল্লোল, কালি-কলম, ক্রান্তি চতুরঙ্গ, দেশ, ধূপছায়া, নিরুক্ত, পরিচয়, প্রগতি,পূর্বাশা, বঙ্গবাণী, ময়ূখ, মাসিক বসুমতি, যুগান্তর উল্লেখযোগ্য। ভাই অশোকানন্দের তত্ত্বাবধানে মৃত্যুর পরে-পরে প্রকাশিত হয়েছিল ‘রূপসী বাংলা’ ও ‘বেলা অবেলা কালবেলা’। এ দুটি কাব্যগ্রন্থে কবিতার সংখ্যা ১০০টি। কয়েকটি গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছিলেন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। এ যেন মনি-কাঞ্চণ যোগ হওয়া।
জীবদ্দশায় জীবনানন্দ দাশ একটিমাত্র সাহিত্য-পুরস্কার পেয়েছিলেন। ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৫২ সালে ‘নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন’ এই পুরস্কার দেয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ১০১ টাকা। কবির মৃত্যুর পরে ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৫৪) ভারত রাষ্ট্র কর্তৃক পুরস্কৃত হয়।
মৃত্যুর পরে জীবনানন্দ’র অজস্র কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধও। প্রায় পঞ্চাশটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর মৃত্যুপরবর্তী ৪০ বছর ধরে তাঁর অগ্রন্থিত কবিতা উদ্ধারের কাজ করেছেন বুদ্ধদেব বসু, অরুণ ভট্টাচার্য, অশোকানন্দ দাশ, গোপালচন্দ্র রায়, জগদীন্দ্র মন্ডল ও সমর চক্রবর্তী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত রুদ্র, দেবেশ রায় প্রমুখ। বস্তুত: তাঁর সম্পূর্ণ রচনার জন্য আমাদের হয়তো আরো অপেক্ষা করতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দের সমস্ত কবিতা পাওয়া যাবে না। কারণ, দেখে গেছে প্রাপ্ত কোনো পত্রিকার সূচীপত্রে কবিতার নাম আছে, কিন্তু পত্রিকাটির আংশিক পাওয়া গেছে এবং সে সংখ্যাটি আর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বা পত্রিকা অফিসে নেই। রাজনৈতিক কারণে পত্রিকা অফিস তছনছ বা জেল-জুলুম – এসব কারণে অনেক পত্রিকা-সংখ্যা নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে ।
জীবনানন্দের হাতের লেখা ছিল জটিল। কবিতায় যথেষ্ট কাটাকুটি ও সংস্কার করতেন, যতক্ষণ না মনঃপুত হত। কবিতা লিখে তিনি বারবার সংশোধন করতেন। আবার অনেকগুলি বিকল্প সংশোধনী লিখে রাখতেন, কোনোটিই না কেটে। যেন, সময় নিতেন কোনটি ভালো হতে পারে কিংবা প্রকাশকের জন্য রেখে দিতেন পছন্দ করার জন্য। সংশোধনী এভাবে রেখে দেয়ায় পান্ডুলিপি অনেক সময় জটিল হয়েছে। এই সংশোধন বা পরিমার্জনের নেশা তাঁর এমনই ছিল যে, যে কবিতাকে পরিশোধন করে পত্রিকায় ছেপেছেন, তাকে পত্রিকা থেকে নিয়ে বইয়ে দেবার আগে আবার সংশোধন করেছেন। এমনকি বইয়েও একবার যে কবিতা ছাপা হয়েছে, পরে তাকেও আবার সংশোধন করেছেন। যেমন- ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ও হৈমন্তিকা’ কবিতাটি ‘সাতটি তারার তিমির’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করার সময় নাম দেন ‘আকাশলীনা’ ও ‘হৈমন্তিকা’র নাম দেন ‘সুরঞ্জনা’। ‘শ্বেতপত্র’ কবিতাটি ‘বনলতা সেন’ গ্রন্থে নাম দেন ‘সবিতা’। প্রকাশককে পুন: সংশোধনীর চিঠি দিতেন দু’চার লাইন লিখে। কখনো কখনো সংশোধনীর সময় থাকত না। তবে এ কথা ঠিক, এভাবে কবিতা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠত। বরং আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত কবিতাগুলি সেই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বরং ঐ কবিতাগুলি কবি কর্তৃক পরিমার্জিত হলে নিশ্চয়ই তা আরও ভালো হতে পারত।
জীবনানন্দ তাঁর লেখা মূল কবিতাকে নিয়ে যেমন বারবার সংশোধন করতেন, তেমনি কবিতার নাম-করণের ক্ষেত্রেও পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত বারবার বদলাতেন। কবিতা লিখে সঙ্গে সঙ্গেই তার নামকরণ করতেন না। পরে পরিশোধন বা পরিমার্জনের সময়ে নাম দিতেন। তাঁর মৃত্যুর পর অনেক কবিতার সম্পাদকেরা নিজেরাই নাম দিয়ে ছাপতেন। তাঁরা কখনো কবিতার প্রথম পঙক্তির প্রথম শব্দ বা কয়েকটি শব্দ বা প্রথম পঙক্তিটি নিয়ে কবিতার নামকরণ করেছেন। তাঁর কোনো-কোনো কবিতা আরেক বইয়ে পুনর্মুদ্রিতও হতো।
উদাসীন জীবনের মতো জীবনানন্দ’র কবিতাও খানিক অগোছালো মধ্যে পড়েছে। কবিতায় তারিখ দিতেন না। কেবল খাতার আরম্ভে (মলাটে) কবির স্বাক্ষর ও মাস-সাল লেখা থাকত। সম্ভবত তা কবিতার তারিখ নয়। কবিতা চূড়ান্ত হলে অন্য খাতায় তার প্রতিলিপি তোলার তারিখ। তাঁর অভ্যেস ছিল দুপুরবেলায় লেখা। জীবনানন্দ সাধারণত পুরোনো বাংলা বানানে লিখতেন (সূর্য্য, দুর্দ্দিন, জার্ম্মানী..)। সাধু ও চলতি ক্রিয়াপদ একসঙ্গে ব্যবহার করতেন। যেমন, ‘হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’, ‘আবার আসিব ফিরে’। তবে সাধু-চলতির প্রয়োগ কবিতায় প্রচলিত আছে। জাতীয় গ্রন্থাগারে জীবনানন্দের ১৯৩১ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত কবিতার ৪৮টি পান্ডুলিপি খাতা রক্ষিত আছে ( ১ থেকে ৪৭ পর্যন্ত ক্রমিক সংখ্যা দেওয়া এবং ৩৫ক ও ৩৫খ দু’খানি খাতা)

রবীন্দ্রযুগের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাসাহিত্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করা ও অবদান রাখা সহজসাধ্য ছিল না। জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অমিয় চক্রবর্তী, অজিত দত্ত প্রমুখ – তিরিশের এই প্রধান কবিরা সকলেই সচেতনভাবে রবীন্দ্রদ্রোহী ছিলেন। তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে কালোত্তর কবি হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েও নতুন কবিতা সৃষ্টির পথে অগ্রসর হয়েছেন। এঁদের পূর্বসূরী ছিলেন কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, মোহিতলাল মজুমদার ও কাজী নজরুল ইসলাম। আধুনিক কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য ও স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছিলেন। ‘পথ ছাড়ো রবীন্দ্রনাথ’ বলে ‘কল্লোল’ পত্রিকা ঘিরে জড়ো হয়েছিলেন একদল মেধাবী তরুণ। তাঁদের নাম হয়েছিল ‘কল্লোল গোষ্ঠী’। তবে কেবল ‘কল্লোল’ একা নয়, অন্যান্য পত্রিকাও সেখানে ছিল।
অনেকে বলেছেন জীবনানন্দ’র কবিতা প্রধানত প্রকৃতির বা প্রধানত ইতিহাস ও সমাজ চেতনার। কারো মতে কবির একান্তই প্রতীকী; সম্পূর্ণ অবচেতনার; সুররিয়ালিস্ট। আরো নানারকম আখ্যা আছে। কিন্তু সে সব আংশিক সত্য, কোনো কোনো কবিতা বা অধ্যায়ে খাটে; সমগ্র কাব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে নয়। এ নিয়ে জীবনানন্দের বেদনা ও ক্ষোভ ছিল। যথাযথ ব্যাখ্যা হচ্ছে না বলে তাঁর আত্মভাস্য রচনার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সে সময় তিনি আর পাননি। তবে জীবদ্দশায় একবার বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, প্রত্যেক সৎ কবিই তার কাব্যের সবেচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমালোচক।’ যে ইতিহাস-চেতনার কথা বলা হয়েছে তা হয়তো তিনি ইংরেজ কবি এলিয়ট ও ইয়েটস-এর কাছ থেকে পেয়ে থাকতে পারেন। ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ প্রকাশের পর বুদ্ধদেব দেব বসু তাঁকে ‘প্রকৃতির কবি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
প্রকৃতির পাঠও তিনি ইংরেজী সাহিত্য থেকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার রবীন্দ্রনাথ থেকে ততখানি নয়– যতখানি তিনি গ্রহণ করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মোহিতলাল মজুমদার ও কাজী নজরুল ইসলাম থেকে। এ অগ্রজ তিনজনই পশ্চিম বাংলার সন্তান। তুলনামূলকভাবে পূর্ব বাংলা অনেক বেশি সবুজ, বর্ণিল, নদীমার্তৃক ও আবহমান। কাজেই, পূর্ব বাংলার প্রকৃতিপাঠ তাঁর মানসগঠনে ভূমিকা রেখেছিল, প্রভাব পড়েছিল। এভাবে তাঁর আপন প্রকৃতিপাঠ তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
‘আমার মনে হয়, প্রত্যেক সৎ কবিই তার কাব্যের সবেচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমালোচক।’- জীবনানন্দ দাশ
‘
কবিতার কথা’ প্রবন্ধে আত্মবিশ্বাসী জীবনানন্দ কবিতা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। কবিতার সংজ্ঞা দিয়েছেন; কবিতায় কী কী থাকবে। বলেছেন- কবিতা অনেকরকম। আবার বলেছেন, সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়েও কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিরাট কাব্যপ্রতিভার প্রতি বিপুল শ্রদ্ধা জানিয়েও জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘তাঁর প্রকৃত কাব্যলোকে সমাজ ও ইতিহাস-চেতনা একটা নির্ধারিত সীমায় এসে তারপর মন্থর হয়ে গেছে।’
জীবনানন্দের কবিতার বিষয়, ব্যবহৃত প্রতীক, উপমা, অনুপ্রাস, উৎপ্রেক্ষা এবং কাব্যভাষাই তাঁকে স্বাতন্ত্র এনে দিয়েছে। এসবই সর্বতোভাবে তাঁর নিজস্ব। তিনি মনে-প্রাণে মফস্বলবাসী। কিন্তু মিশ্রণ ঘটিয়েছেন গ্রামের সঙ্গে নগরের, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের, পুরোনোর সঙ্গে নতুনের। শ্রাবস্তী, বিদিশা, সিংহল সমুদ্রতীর ছেড়ে এসে যেই দেখি ‘নাটোরের বনলতা সেন তার পাখির নীড়ের মত চোখ মেলে বলে – এতদিন কোথায় ছিলেন’, তখন আকস্মিক বিস্ময়ে আমরা শিহরিত হই। এত দূর আর এত কাছের সেতুবন্ধনে এই হচ্ছে জীবনানন্দের কৌশল। প্রেমের কবিতার মধ্যেও তাঁর প্রকৃতির প্রলেপ বাদ যায় না। বাংলার গাছপালা, ফল, পাখি, জীবজন্তুর এত নাম আর কোনো কবির রচনাতে পাওয়া যায় না।
তাঁর অরণ্যে কী নেই! শিরীষের ডাল, অশত্থের চূড়া, উঁচু উঁচু হরিতকি গাছ, বাবলার গলির অন্ধকার, অর্জুনের বন, আম, জাম, নিম, ঝাউ, পিয়াল, শাল পামের নিবিড় মাথা, বট, আমলকি, পিপুল, দেবদারু, তলায় ফণীমনসার কাঁটা, জামিরের বন, শরকাশ, হোগলা, মধুকূপী ঘাস, বাঁশঝাড়, তালশাঁস, সবই তো প্রায় আছে। কান পাতলেই কবিতায় দিনভর এক অরণ্যের মর্মরধ্বনি শোনা যায়। যেন হেমন্তের পাতা গায়ে মাথায় ঝরঝর করে কেবল ঝরেই যাচ্ছে।
জীবনানন্দের কবিতায় শুধু অরণ্য নয়, এক অভয়ারণ্যের উপস্থিতি সেখানে । ঝোপ-ঝাড়-গাছপাপালার সে অরণ্য-প্রকৃতিতে ঘাই হরিণী, নীলগাই, কাক, চিল, দুরন্ত শকুন, বুনো হাঁস, থুরথুরে পেঁচা, মাছরাঙা, শালিখ, শাদা বক, গঙ্গাফড়িং, চড়–ই, দোয়েল, কাকাতুয়া, মশা আর নীল মাছ, শঙ্খচূড় সাপ, কাঁচপোকা, কীট-পতঙ্গের অবাধ প্রবেশ। এদের যাতায়াতে চঞ্চল হয়ে ওঠে সে অরণ্য। রঙের বর্ণনারও শেষ নেই। তাঁর বীক্ষণী দৃষ্টিতে কিছুই বাদ যায় না। কত ধরণের যে লাল, নীল, সবুজ, হলুদের বর্ণনা আছে তা বলার নয়! গাছের প্রতিটি পাতা, প্রাণি, আকাশ, মাটি, জল থেকে তা আহরিত। ময়ূরের নীল-সবুজ ডানা, কোমল নীল ঘাসফড়িঙের দেহের মতো, লেবুর কচি পাতার মতো সবুজ, মচকা ফুলের পাপড়ির মতো লাল। বাংলার নদী, মাঠ-ঘাট, ঋতু তথা সমগ্র রূপ-প্রকৃতির বন্দনা অমন ঘনিষ্ঠভাবে কে আর জানতো! তার সতীর্থ কবিরা – সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অমিয় চক্রবর্তী, অজিত দত্ত – এঁরা প্রত্যেকেই রবীন্দ্রোত্তরকালে অসাধারণ কবিতা রচনা করেছেন। কিন্তু জীবনানন্দ যে শক্তি ও মৌলিকতা দেখিয়েছেন, তা আর কেউ পারেননি। কবি ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না তিনি। তাঁর জীবনই কবিতা, কবিতাই জীবন। রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা যেখানে সমগ্র জীবন ও সংস্কৃতিতে মহীরুহ, সেখানে কবিতায় জীবনানন্দের প্রতিপত্তি আকাশচুম্বী।
‘আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশে।’ …এখানে আকাশের অন্তহীন নীলিমার বিস্তৃতি একটি লাইনে আঁকা হয়েছে। কীভাবে? আকাশ কথাটার পুনরাবৃত্তি করবার জন্যই ছবিটি একেবারে স্পষ্ট, সজীব হয়ে উঠেছে। কিংবা ‘নিবিড় বটের নিচে লাল লাল ফল প’ড়ে থাকে।’… সঙ্গে সঙ্গে যেন বটের নিচের ছবিটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বলার শেষ নেই। ‘প্রেমিক চিলপুরুষের শিশিরভেজা চোখের মতো ঝলমল করে নক্ষত্র’, ‘বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে’ কিংবা ‘কড়ির মতন শাদা মুখ তার’, চোখ তার হিজলকাঠের রক্তিম চিতা জ¦লে’ (কাঁচা হিজল কাঠের ছাল ছাড়িয়ে দেখতে হয়), ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ’ – এসব তুমুল গাঢ় সমাচার আমরা আর কোথায় পাই! এ সকল উপমা, প্রতিমা, শব্দের জাদুকরী খেলা একান্তই জীবনানন্দীয় । আবার বক্তব্যকে ঘনীভূত করার জন্য প্রতীক ছাড়াও একটি কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা যায়, সে কৌশলও তাঁর। ‘শিকারীর গুলির আঘাত এড়িয়ে জ্যোৎস্নায় বুনো হাঁস উড়ে যায়’, কিংবা ‘জোনাকীতে ভ’রে যায় অন্ধকারে আকন্দধুন্দুল’। আরও আছে। সেই সাথে এ কথাও বলতে হবে যে, এ-সব দেখার দৃষ্টি চাই, এ কোনো সৌখিন কল্পনার কর্ম নয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবার মতো দৃষ্টি জীবনানন্দ সেই গ্রাম থেকেই পেয়েছিলেন প্রাণ ভরে। আর জীবনানন্দীয় উপমার ঐশ্বর্য ও যে গাছপালা-জীবজন্তুর জগৎ থেকে সংগ্রহ করা – তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
আরেকটি বিষয় বলতে হবে। তাঁর কবিতায় ফুল-ফল তেমন নেই। কিন্তু ফসল আছে। ধান, যব, গোধূম। ধানের গল্প বলতে তাঁর ক্লান্তি নেই। অন্যান্য কবিরা যেখানে বর্ষা ও বসন্তের বন্দনায় মুখর, জীবনানন্দ সেখানে হেমন্তের গানে বিভোর। হেমন্ত তাঁর কাছে শস্যের, তৃপ্তির, বিরতির। হেমন্ত তাঁর কাছে জীবন ও মৃত্যু, সভ্যতা ও সংকট, পূর্নতা ও বিনষ্টির একাত্মতা প্রতীক।
হেমন্তের ধান ওঠে ফলে–
দুই পা ছড়ায়ে বোসো এইখানে পৃথিবীর কোলে।
গর্ভবতী জননীর মতো সে:
আমি সেই সুন্দরীর দেখে লই — নুয়ে আছে নদীর এ-পারে
বিয়োবার দেরি নাই — রূপ ঝ’রে পড়ে তার
শীত এসে নষ্ট ক’রে দিয়ে যাবে তারে।
(অবসরের গান)
জীবনানন্দের শব্দচয়নও বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। মাঝে-মধ্যে বাংলা অভিধান দেখে অর্থ বুঝে নিতে হয়। বিলোল বায়ু, লবেজান হাওয়া, মরখুটে কানা ঘোড়া, ফারোর ফাঁকে ফাঁকে, নাহরের শাখার মতন, অকূল অলখ থেকে হাওয়া, পৃথিবীর অনন্ত বোনভায়ে, তিমির রাত্রির ক্রেংকার, হত্তেল ঘুঘুদের ঘরে, মানুষের অরুন্তুদ চেষ্টার ভিতরে, এমনি আরো আছে।
তাঁর কবিতায় শারীরিকতা বা আধ্যাত্মিকতা নেই। তাঁর কবিতা গভীরভাবে বোধ ও চেতনার। তাঁর কবিতায় সমকালের চেয়ে অতীত ইতিহাসের প্রয়োগ ঘটেছে বেশি। ভূগোল, কাল ও দেশের ছড়াছড়ি তো আছেই। বিদর্ভ, বিদিশা, বিম্বিসার, অশোক, শ্রাবস্তি, সিংহল, বৈশালি, অজন্তা, ইলোরা, উজ্জয়িনী, কারবালা, কালীদহ, গাঙুড়, বেবিলন, কাঞ্চি, নিনেভে, নাটোর, সুমাত্রা, হিটলার, ফারাও, মাইকেলএঞ্জেলো, শকুনিমামা, প্লেটো, পিরামিড, ত্রিশঙ্কু, দধীচি, অহল্যা, উর্বশী, তাজমহল, তিলোত্তমা, দ্বারকা, রুশো, লেনিন, স্ট্যালিন, দেশবন্ধু, বেথেলহেম, কীর্তিনাশা, ধানসিঁড়ি, কালনেমী, দামোদর, যমুনা, প্যারিস, টোকিও, জাঞ্জিবার, কার্থেজ, পতঞ্জলী, তক্ষশীলা, দিল্লি, মিশর, মিউনিখ, মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু, ধন্বন্তরী, দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, নচিকেতা, পিকাসো, কাশী, কাশ্মীর, কুরুক্ষেত্র, বুদ্ধ, বৃন্দাবন, রবীন্দ্রনাথ, জরাথুস্ট্র, কুনফুসিয়াস, শাজাহান, হংকং, হেগেল, গগাঁ, হ্যারিসন রোড – এমনি আরো বহু নাম পাওয়া যায় তাঁর কবিতায়। অর্থাৎ পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত যেন।

সমালোচিত জীবনানন্দ দাশ, সাথে অশ্লীলতার অভিযোগ
জীবনানন্দ ইংরেজী সাহিত্যের মানুষ। প্রথমদিকে ইংরেজীতে কবিতা লিখতেন। বিষ্ণু দে একবার তা ফেরৎ দিয়েছিলেন ছাপার অযোগ্য বলে। তার আগেই অবশ্য জীবনানন্দ ইংরেজীতে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন। কেবল নিজের কয়েকটি কবিতার ইংরেজী অনুবাদ করেছিলেন; বনলতা সেন, বেড়াল, অন্ধকার, মনোসরণি ও নাবিক।
জীবনানন্দ একদিকে যেমন ছিলেন উপেক্ষিত ও অবহেলিত, অন্যদিক আক্রমণের লক্ষ্যও ছিলেন বটে। রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল দুদলেরই প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ হতেন তিনি। তাঁর সমালোচকরাও ছিলেন নিজ নিজ পরিচয়ে ভাস্বর; কবি-সাহিত্যক, সম্পাদক। ননী ভৌমিক, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অজিত দত্ত, সজনীকান্ত দাস, মৃগাঙ্ক রায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ। তবে সমালোচনাকারীদের শীর্ষে ছিলেন সজনীকান্ত দাস। ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকাটি ছিল আধুনিক সাহিত্য-বিরোধী। সেখানে জীবনানন্দ দাশের কবিতার ব্যাঙ্গাত্মক সমালোচনা লিখেছিলেন সজনীকান্ত দাস। তা এরকম:
মারি তো গন্ডার লুটি তো ভান্ডার। কবি জীবনানন্দ দাশগুপ্ত এইবার দুটি গন্ডামারী কবিতা লিখিয়াছেন। একটি ‘ধূপ-ছায়া’য় ও অপরটি ‘প্রগতি’ পত্রিকায়। কবিতা দুইটি ভাবে ভাষায় ভঙ্গিতে দৈর্ঘ্যে অনবদ্য। প্রথমটি হইতে উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না।
কবিতাটি ‘ধূপছায়া’র পাঁচ পাতাব্যাপী, মোট ৩০ লাইন। … তাহার মতন, মানুষের মতো, নক্ষত্রের মতো, মৃত্যুর মতো, যোদ্ধার মতো, সেনাপতির মতো, সিন্ধুর মতো, বীণার মতো, পাতার মতো, পাখির মতো, শাখার মতো, বাতাসের মতো, অঙ্গারের মতো, এই রূপ সমগ্র কবিতাটিতে ৫৭টি ‘মতো’ আছে। ‘প্রগতি’রটিতে ‘মতো’ আছে ২০টি। তবে ‘হাঁদার মতো’ এই উপমাটি কিন্তু দুটি কবিতার একটিতেও নাই।
কী কঠোর সমালোচনা! সজনীকান্তের নিয়মিত আক্রমনের আরো উদাহরণ আছে:
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে; (বোধ কবিতা থেকে)
কবি সব করিয়াই দেখিয়াছেন। শুধু বিবাহ করিয়া ‘মেয়েমানুষেরে’ দেখেন নাই। দেখিলে ভাল হইত, গরীব পাঠকেরা বাঁচিত।
সজনীকান্তের আরেক লেখা
এই প্রতিভাবান কবিদের আরেকটি কৌশল — কবিতা লিখিতে লিখিতে অকারণে আকস্মাৎ এক-একজন ভদ্রলোকের মেয়ের নাম করিয়া আমাদিগকে উৎসুক ও উৎসাহিত করিয়া তোলেন। ‘ইকনমিক্স’ লিখিতে লিখিতে শ্রীযুক্ত বুদ্ধদেব বসু অকারণে ‘রানি’কে টানিয়া আনিয়াছেন। ‘জাতক’-এ শ্রীজ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ‘সুরমা’ নামীয়া একটি ভদ্রমহিলাকে অত্যন্ত লজ্জা দিয়াছেন। এবং ‘বসন্তের গান’ – এ শ্রী সমর সেন ‘মালতী রায়’ নামক কোনও কামিনীর ‘নরম শরীর’ লইয়া যাহা করিবার নয় তাহাই করিয়াছেন। ইহার সূত্রপাত হইয়াছে ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে লইয়া।
কী সাংঘাতিক অভিযোগ! অথচ কালের প্রবাহে পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তীত হয়েছিল! অভিযুক্ত জীবনানন্দবাবু ও তাঁর কল্পিত নায়িকা বনলতা সেন আজ বাংলা কাব্যসাহিত্যের চূড়ায় অবস্থান করছেন; জ্বলজ্বল করছে হীরকখন্ডের মতো। ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতার পরও সাহিত্যিকভাবেই জীবনানন্দ দাশকে এভাবে অনেক আঘাত, অপমান ও আক্রমনের মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরও তিনি সেসব খানাখন্দ পেরিয়ে, বন-জঙ্গল উত্তীর্ণ হয়ে জীবনানন্দ বিশাল খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এত সমালোচনার মাঝে একমাত্র বুদ্ধদেব বসুই সারাজীবন তাঁর প্রশংসা করে গেছেন। কিন্তু বাকিরা ছিলেন প্রায় অপরিবর্তীত।
জীবনানন্দকে অনেকে ‘স্বপ্নকল্পনা’র বা ’স্বপ্নাক্রান্ত’ কবি বলেছেন। তা ঠিক নয়। তাঁর কবিতায় স্বপ্ন ও বাস্তবের মিশ্রণ ঘটেছিল; সমাজ ও ইতিহাস-চেতনা কাজ করেছিল। সে ইতিহাস-চেতনা বর্তমানে এসে মিশে ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁর কবিতা উপমা, অলংকারভারে ভারাক্রান্ত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেটিই তাঁর কবিতাকে অনন্য করে তুলেছে যা অন্যদের আয়ত্তাতীত। অনেকের ধারণা, জীবনানন্দ সারা জীবন একই বিষয়ের মধ্যে আবৃত্ত-পুনরাবৃত্ত হয়েছেন। কিন্তু এ কথা সত্য বলে মানা যায় না। হয়তো তাঁর নিজস্ব ভাষারীতির কারণে এমনটি মনে হতে পারে। জীবনানন্দ দাশ যখন বলেন, ‘কবিতা অনেকরকম’, তখন যারা বলেন তিনি প্রায় একরকম কবিতাই লিখে গেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই চকিত হয়ে ওঠেন। একরকম কবিতা তিনি লেখেননি। জীবনের অজস্র দিককে তিনি স্পর্শ করেছেন। তাঁর কবিতা বৈচিত্রচারণার। তবে এ কথা ঠিক, একই বিষয়ের উপর তিনি অনেকসময় কবিতা লিখেছেন। যেমন- আবার আসিব ফিরে, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তোমরা যেখানে সাধ – কবিতাগুলির বিষয় প্রায় একই। এখানে রুপসী বাংলার জন্য তাঁর গভীর স্পন্দন, গভীর মায়া ভাবনা কাজ করেছে। এর কারণ একটি কবিতার থিম তাঁকে অনেকদিন তাড়া করে ফিরত। ফলে একগুচ্ছ কবিতা বেরিয়ে আসত সেখান থেকে। এভাবে কিছু কিছু কবিতা তিনি লিখেছেন সত্য। আর পুনরুক্তির কথা যদি আসে, সেটা দোষের কিছু নয়। নির্ভর করে প্রাসঙ্গিকতা। পুনরুক্তি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কে বেশি করেছে! জীবনানন্দের সেই হিজলবন, হলুদ পাতা, হেমন্তের কুয়াশা, মেঘের দুপুরে সোনালি চিল, ধানসিঁড়ি নদী, সবুজ ঘাসের দেশ পড়তে পড়তে যে মোহ সৃষ্টি হয়, তাতে পুনরুক্তির কথা কি আর মনে আসে! বরং সে উপমা-আধারের আবর্তে পড়ে পাঠকের মনে যে সুরের সৃষ্টি হয় তার রেশ ধরে ছুটতে গিয়ে নিজ গরজেই পড়তে থাকেন, যতক্ষণ না কবিতার শেষ অব্দি পৌঁছান।
‘বনলতা সেন’ কবিতাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা হয়েছে প্রথম থেকেই। এমন স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ রোমান্টিক কবিতা বাংলা সাহিত্যে অল্পই আছে। এটি একটি অমর সৃষ্টি এবং রবীন্দ্রনাথের পর এত সুন্দর ও সার্থক রোমান্টিক কবিতা আর বুঝি সৃষ্টি হয়নি। এ কবিতায় কবির প্রেম – স্বপ্ন, আনন্দ বেদনা, সমকাল ও মহাকালকে স্পর্শ করতে চেয়েছে। বনলতা সেন-এর সঙ্গে কবির মিলন হয় স্বপ্নের মধ্য দিয়ে (ফুরায় এ- জীবনের সব লেনদেন)। একই সঙ্গে প্রেম ও মৃত্যু মাখামাখি হয়ে আছে।
আধুনিক বাংলাসাহিত্যে প্রেমকাব্য কম রচিত হয়নি। সেখানে অসামান্যা প্রেমিকারা রয়েছে। কিন্তু জীবনানন্দের নায়িকারা যেন সব নারীত্বের সারাৎসারে পরিণত হয়েছে। নাটোর নামক এক সামান্য শহরের বনলতা সেন হয়ে উঠেছে চিরন্তনী। সুরঞ্জনা, সুদর্শনা, শ্যামলী, সুচেতনা, অরুণিমা সান্যাল, শঙ্খমালা, সবিতা, নীহারিকা মিত্র, মৃণালিনী ঘোষাল, বনচ্ছবি – এসব নারী নারীর অধিক ও অতীত।
এ কথা পরিষ্কার যে, জীবনানন্দের কবিতার সমকালীন প্রতিক্রিয়ায় যেমন ছিল উপেক্ষা-অবহেলা, তেমনি ছিল ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ আর আক্রমণে ঠাসা। আবার পাশাপাশি স্বীকৃতি-গুণালোচনা-প্রশংসাও ছিল। তবে সময়ের সাথে তাঁর স্বীকৃতি বেড়ে চলছিল। জীবনানন্দ নিজেই বলেছিলেন, মৃত্যুর পরেই একজন লেখকের সম্পূর্ণ জীবনবেদ উন্মোচিত হয়। তাঁর মৃত্যুর পর পত্রিকাগুলো জীবনানন্দ-সংখ্যা প্রকাশ করে তার প্রমাণ রেখেছিল। তারা লিখেছিল: ‘রবীন্দ্রত্তোর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ।’
মুত্যু এসে জীবনের বৃত্ত পূর্ণ করে। জীবনানন্দ দাশ তাঁর পঁয়ত্রিশ বছরের (১৯১৯ থেকে ১৯৫৪) তন্ময় কাব্যসাধনায় সে বৃত্ত পূর্ণ করে অসময়ে চলে গেলেন। নইলে সে বৃত্তের পরিধি আরো বড় হত। জীবনানন্দ দাশ ও তাঁর কবিতা নিয়ে আমাদের আলোচনা কখনো শেষ হবে না, নক্ষত্রের মতই তা জ্বলজ্বল করবে। কারণ, বাংলাসাহিত্যে জীবনানন্দ দাশ একজন মহৎ কবি।
জীবনানন্দ দাশের লেখা এবং তাকে নিয়ে লেখা অসাধারণ ৫ টি বই
জীবনানন্দ দাশের সকল বই সমূহ কিনুন রকমারি ডট কম থেকে !
*লিখেছেনঃ গোপাল বাগচী
1 thought on “জীবনানন্দ দাশ: সলজ্জ এক কবি যাঁর পাণ্ডুলিপি এখনো আবিষ্কার করে ফিরতে হয়”
Pingback: ‘একজন নির্জনতম’র জীবনানন্দ দাশ- কতখানি কল্পনা? - রকমারি ব্লগ